বাঁধ ভেঙে তলিয়ে গেছে হাওরের আধাপাকা ধান

বাঁধ ভেঙে তলিয়ে গেছে হাওরের আধাপাকা ধান

রয়েল ভিউ ডেস্ক :
উজানে টানা বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে বাঁধ ভেঙে সুনমগঞ্জ, হবিগঞ্জের বিভিন্ন হাওরের আধাপকা ধান তলিয়ে গেছে। শেষ মুহূর্তে পাকা ধান ডুবে যাওয়ায় হতাশ কৃষক। এছাড়া নেত্রকোণা ও কিশোরগঞ্জের বিভিন্ন হাওরে যেকোনো মুহূর্তে পানি ঢুকে ফসলহানির আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।

এসব অঞ্চলের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে জানা যায়-

সুনামগঞ্জ: সুনামগঞ্জে রোববার (১৭ এপ্রিল) বিকেলে তাহিরপুর উপজেলার বর্ধিত গুরমার হাওরের বাঁধ ভেঙে গলগলিয়া হাওরের প্রায় ৩০০ হেক্টর ও রাতে দিরাই উপজেলার হুরামন্দিরা হাওরের বাঁধ ভেঙে আরও ৩০০ হেক্টর জমির ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে।

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শামসুদ্দোহা জানিয়েছেন, রোববার সকাল ১০টা পর্যন্ত জেলায় সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার দশমিক ৯ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে ভারতের চেরাপুঞ্জিতে আজ ৬৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।

অব্যাহত পানি বৃদ্ধির ফলে ঢলের স্রোতে রোববার সন্ধ্যা থেকে দিরাইয়ে হুরামন্দিরা হাওরের ৪২ নম্বর পিআইসি বাঁধের সাতবিলা রেগুলেটর সংলগ্ন অংশ ভেঙে গেছে। এতে ৩০০ হেক্টর বোরো ধান তলিয়ে গেছে।

হবিগঞ্জ: কালনী ও মেঘনা নদীর পানি ঢুকে হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলায় তিনটি হাওরের শতাধিক হেক্টর বোরো ধানের জমি তলিয়ে গেছে। আর দুদিন এভাবে পানি বাড়লে প্রায় তিন হাজার হেক্টর বোরো জমি তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। কৃষকরা এ পরিস্থিতিতে আধাপাকা কাটা শুরু করেছেন।

উপজেলার এক নম্বর লাখাই ইউনিয়নে অবস্থিত মেঘনা ও কালনী নদী সরাসরি হাওরের সঙ্গে যুক্ত। ফসল রক্ষা বাঁধ না থাকায় গত দুদিন ধরে নদীর পানি হাওরে ঢুকছে। এতে ইউনিয়নটির শিবপুর, সুজনপুর ও বারচর হাওরের শতাধিক হেক্টর জমির আধাপাকা ধান পানির নিচে তলিয়ে গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, লাখাইয়ে এ বছর বোরো ধানের আবাদ হয়েছে ১১ হাজার ২০০ হেক্টরে। এর মধ্যে শুধু লাখাই ইউনিয়নে হয়েছে ৩ হাজার ৪০০ হেক্টরে। কিছু জমিতে ব্রি-২৮ জাতের ধান প্রায় ৬০ শতাংশ পেকেছে। তবে বেশিরভাগ জমির ধান অর্ধেকও পাকেনি। হাওরগুলোতে এখন ধানের শীষ ডুবুডুবু অবস্থায়।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা জানান, ৭০ হেক্টর বোরো জমি পুরোপুরিভাবে তলিয়ে গেছে বলে তারা তালিকা করেছেন। আগামী দুই দিন এভাবে পানি বাড়লে কমপক্ষে আরও ৫০০ হেক্টর জমি তলিয়ে যাবে।

তিনি আরও জানান, হাওরের সঙ্গে নদী সরাসরি যুক্ত হওয়ায় পানি বেশি ঢুকছে। হাওরের কিছু ধান প্রায় ৬০ শতাংশ পেকেছে। অনেক স্থানে অর্ধেকও পাকেনি। অনেক কৃষক আঁধাপাকা প্রায় ৫০০ হেক্টর জমির ধান ঘরে তুলেছেন। এখনও বাকি ৩ হাজার হেক্টর জমি তলিয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে। তবে কিছু ধান কাঁচা থাকতেই কৃষকদেরকে কাটার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। অনেক তা করছেনও।

নেত্রকোণা: সোমবার সকাল ১০টার দিকে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহন লাল সৈকত জানান, জেলার ধনু নদের খালিয়াজুরী পয়েন্টে বিপৎসীমার ২২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া কীর্তনখোলা বাঁধের ৭ কিলোমিটার এলাকার অন্তত ২০টি স্থানে ফাটলের সৃষ্টি হয়। উপজেলা প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে সেগুলো সংষ্কারে কাজ করা হচ্ছে। তবে এখনও বাঁধ সুরক্ষিত রয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, রোববার বিকেল পর্যন্ত জেলার ৬৫ বোরো ধান কাটা শেষ হয়েছে।

কিশোরগঞ্জ: ধনু, বাউলাই, মেঘনা কালনী ও কুশিয়ারা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। কালনী ও কুশিয়ারা নদীর পানি ১১ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। বাউলাই নদীর পানি ১২ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ২২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। মেঘনা ও ধনু নদীর পানি বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই করছে।

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মতিউর রহমান বলেন, আর কিছুক্ষণের মধ্যে ধনু নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। এতে আগাম বন্যার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

জেলা প্রশাসন থেকে জানানো হয়েছে, জেলার ৭৩টি বাঁধ এখনও অক্ষত আছে। কিছু ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ সংষ্কার করা হচ্ছে। সোমবার সকাল পর্যন্ত জেলার ৩৫ ভাগ বোরো ধান কাটা হয়েছে। হাওরের ধান পাকতে এখনও কমপক্ষে এক সপ্তাহ সময় লাগবে।