মেয়রের দায়িত্ব নিলেন   আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী 

মেয়রের দায়িত্ব নিলেন   আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী 


বিদায়ী মেয়র সিলেটকে অনেক বদলে দিয়েছেন, নতুন মেয়রকে আরো কাজ করতে হবে-মন্ত্রী ইমরান আহমদ 


রয়েল ভিউ ডেস্ক:  সিলেট সিটি কর্পোরেশনের (সিসিক) নতুন মেয়র হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করলেন আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। বিদায়ী মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিকভাবে নবনির্বাচিত মেয়রের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করেন। এ উপলক্ষে সিটি কর্পোরেশন ছিলো উৎসবমুখর। দুপুরে মূল অনুষ্ঠানের সূচনা হলেও সকাল থেকে কর্পোরেশন এলাকায় মানুষের উপস্থিতি ছিল তুলনামূলক বেশি। 
দায়িত্ব হস্তান্তর উপলক্ষে মঙ্গলবার এক সুধী সমাবেশের আয়োজন করা হয়, সিটি কর্পোরেশন প্রাঙ্গণে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ এমপি বর্ণিল এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন। নতুন এবং পুরাতন-দুই মেয়রের সঙ্গে মঞ্চে ছিলেন দুই পরিবারের সদস্যরা।

আলোচনার পূর্বে ছিলো কিছু আনুষ্ঠানিকতা। তার মধ্যে ছিলো বিকেল সাড়ে তিনটায় নগর ভবনের মেয়র কক্ষে দায়িত্ব হস্তান্তর পর্ব। এসময় বিদায়ী মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী এবং নতুন মেয়র মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী-উভয়কে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান হয়। দায়িত্ব হস্তান্তরের সময় উপস্থিত ছিলেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ এমপি। 
বিকেল সাড়ে তিনটায় নগরভবন প্রাঙ্গণে দায়িত্ব হস্তান্তর উপলক্ষে আয়োজিত সুধী সমাবেশ দুই মেয়রের সাথে ছিলেন ৪২টি ওয়ার্ডের সাধারণ কাউন্সিলর, সংরক্ষিত কাউন্সিলরগণ এবং অতিথিরা। 

জাতীয় সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ইমরান আহমদ এমপি বলেন, সিসিকের নেতৃত্বের পালাবদলের ইতিহাসে আজকের এই আয়োজনটি ঐতিহাসিক।
বিদায়ী মেয়র সিলেটকে অনেক বদলে দিয়েছেন। রাস্তাঘাট প্রশস্ত করেছেন। অনেক উন্নয়ন করেছেন। তবুও সিলেট নগরের মানুষের জীবনমান উন্নয়নে নতুন মেয়রকে আরো অনেক কাজ করতে হবে। সিলেটকে সুন্দর করে সাজাতে হবে। এই কর্পোরেশনের প্রথম মেয়র প্রয়াত বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের উত্তরসূরি নয়া মেয়র মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী সিলেটকে উন্নত নগরে পরিণত করতে কাজ করবেন। সিলেটের উন্নয়নে সরকারের সহযোগিতা অব্যাহত রয়েছে, আগামীতেও থাকবে।

সুধী সমাবেশে মেয়র মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বক্তব্যের শুরুতে কৃতজ্ঞতা জানান বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি। কৃতজ্ঞতা জানান, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ রেহানা এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দের প্রতি। যাদের ভোটে তিনি মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন, সেই সাথে সিলেট নগরবাসীর প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে ভুলেননি। সিলেটের প্রয়াত সব রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ-যারা আমৃত্যু সিলেটের উন্নয়নে কাজ করে গেছেন তাদের প্রতিও সম্মান জানান মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী।
আওয়ামী লীগের দেশব্যাপী উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় সিলেটকে একটি তিলোত্তমা নগরে রূপান্তরের প্রত্যাশা ব্যক্ত করে মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, সিলেটকে বাসযোগ্য নগরী হিসেবে গড়ে তোলা আমার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি। সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে আমি সর্বশক্তি নিয়োগ করবো।  এজন্য সিলেট নগরবাসীর সহযোগিতা প্রয়োজন।
তিনি বলেন, আধ্যাত্মিক ও পর্যটন নগর খ্যাত সিলেটের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা আরো বেগবান করতে সকলের সহযোগিতায় তার পরিষদ যথাযথ দায়িত্ব পালন করবে। 
নগর উন্নয়নে বিদায়ী মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর সহযোগিতা কামনা করে তার সুযোগ্য নেতৃত্বে বিগত ১০ বছরে সিসিকের অগ্রযাত্রার প্রশংসা করেন। আগামী দিনে নগর উন্নয়নে সিলেটবাসীর সহযোগিতাও কামনা করেন তিনি। 
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের মনোনয়নে আমি মেয়র নির্বাচিত হলেও সিসিকের মেয়র হিসেবে আমি সিলেটবাসীর মেয়র। নগর ভবন থাকবে রাজনীতিমুক্ত। সবার জন্য নগর ভবন উন্মুক্ত থাকবে বলেও প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন তিনি। 
সিসিকের বিদায়ী মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী তাঁর বক্তব্যে বলেন, আমি কৃতজ্ঞ নগরবাসীর কাছে। নগরবাসীর নিকট আমি চিরঋণী হয়ে থাকবো। আপনাদের ভালোবাসায় দুই মেয়াদে মেয়রের দায়িত্ব পালন করেছি। সিটি কর্পোরেশনকে একটি জনবান্ধব নগর প্রতিষ্ঠায় নগরবাসীর সহযোগিতা পেয়েছি। সিলেট সিটি কর্পোরেশন টানা ৪ অর্থবছরে কর্মসম্পাদন চুক্তির বাস্তবায়নে দেশ সেরা হয়েছে। নগরের সড়ক প্রশস্তকরণে সিলেটের নাগরিকরা কোটি টাকার নিজস্ব ভূমি দান করে দেশের ইতিহাসে বিরল এক উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন। বিদায় বেলা আমি ভূমিদাতাগণসহ সিলেটের উন্নয়নে যারা নানাভাবে সহযোগিতা করেছিলেন;তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। 
আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, আমার পরিষদের দুই মেয়াদে রাজনৈতিক মতপার্থক্যের ঊর্ধ্বে উঠে নাগরিক সেবা ও উন্নয়নে কাজ করার সর্বাত্মক চেষ্টা করেছি। তিনি বলেন, মেয়র হিসেবে না থাকলেও, আমি আপনাদেরই মানুষ। যে অবস্থানেই থাকি, সিলেটের উন্নয়নে আপনাদের আরিফকে পাশে পাবেন। এসময় তিনি সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী প্রয়াত এম সাইফুর রহমান, সাবেক অর্থমন্ত্রী প্রয়াত আবুল মাল আবদুল মুহিত, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, স্বাধীনতার পর সিলেট পৌরসভার প্রথম চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা বাবরুল হোসেন বাবুল, সাবেক পৌর চেয়ারম্যান আ ফ ম কামাল, সিসিকের প্রথম মেয়র প্রয়াত বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। 
অনুষ্ঠানে বিশিষ্টজনেরা বলেন, বিদায়ী মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী তার মেয়াদে নগর উন্নয়নে রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে কাজ করেছেন। সিলেটের উন্নয়ন প্রশ্নে তিনি ছিলেন আপসহীন। নয়া মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী সিলেটের রাজনৈতিক সৌহার্দ্য বজায় রেখে সিলেটকে স্মার্ট নগরে রূপান্তর করবেন। 
অনুষ্ঠানের শুরু হয় পবিত্র কুরআন তেলাওয়াত, পবিত্র গীতা, পবিত্র ত্রিপিটক ও পবিত্র বাইবেল পাঠ করার মধ্য দিয়ে। পরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মহান ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের শহীদগণ, জাতীয় ও সিলেটের প্রয়াত রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, সিলেট পৌরসভা এবং সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রয়াত চেয়ারম্যান, মেয়র, কমিশনার, কাউন্সিলর এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আত্মার শান্তি কামনা করে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। 
সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রজত কান্তিগুপ্ত ও সংস্কৃতিকর্মী জান্নাতুল নাজনীন আশার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন-সিসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ফাহিমা ইয়াসমিন। পরে সিসিক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর উপর নির্মিত একটি ভিজ্যুয়াল প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করা হয় এবং ভিজ্যুয়াল প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে সিসিকের ৪২টি ওয়াডের্র সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলরদের পরিচিতি তুলে ধরা হয়। একই সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এমপি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য সৈয়দা জেবুন্নেছা হকসহ বিশিষ্টজনদের ভিডিও বার্তা উপস্থাপন করা হয়। 
সুধী সমাবেশে বক্তব্য রাখেন-বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য সৈয়দা জেবুন্নেছা হক, সংসদ সদস্য হাফিজ আহমদ মজুমদার, সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক, সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিব, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সিলেট মহানগর শাখার সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সিলেট জেলা শাখার সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য মো. শফিকুর রহমান চৌধুরী, সিলেট জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সিলেট জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মো. নাসির উদ্দিন খান এডভোকেট, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সিলেট মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মো. জাকির হোসেন, সাবেক সচিব নজরুল ইসলাম খান, সিলেট বিভাগীয় কমিশনার আবু আহমেদ সিদ্দিকী, সিলেট মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. ইলিয়াছ শরিফ, সিলেটের জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান, সিলেট জেলা পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল মামুন, বিশিষ্ট শিল্পপতি ইকবাল আহমদ, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাজিদুর রহমান ফারুক প্রমুখ। 
এছাড়াও উপমহাদেশের প্রখ্যাত শিল্পপতি, শিল্প সাহিত্যের পৃষ্ঠপোষক ড. রাগীব আলীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং সুশীল সমাজের অনেকেই সুধী সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন। 
এর আগে বাদ জোহর মেয়র মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী সহ নবনির্বাচিত কাউন্সিলরবৃন্দ হযরত শাহজালাল (রহ.) মাজার জিয়ারত করেন। 
সুধী সমাবেশে বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ, সিসিকের ৪২ ওয়ার্ডের সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলরগণ, সিলেটের বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিগণ, সিলেটের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি দপ্তর-সংস্থার প্রতিনিধিগণ, নাগরিকবৃন্দ, সিসিকের সকল পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ উপস্থিত ছিলেন। 
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথিকে সম্মাননা তুলেন দেন বিদায়ী ও নবনির্বাচিত মেয়র। বিদায়ী মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন নতুন মেয়র মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। এসময় মেয়র পত্মী হলি চৌধুরী বিদায়ী মেয়র পত্মী সামা হক চৌধুরীর হাতে উপহার সামগ্রী তুলে দেন। 
সুধী সমাবেশ শেষে বিদায়ী মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে নবনির্বাচিত মেয়র মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী সহ সিসিকের সকল কাউন্সিলর, সংরক্ষিত কাউন্সিলরগণ, সিসিকের কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ তাঁর কুমারপাড়াস্থ বাসভবনে র‌্যালি করে পৌঁছে দেন। 
প্রসঙ্গত, গত ২১ জুন অনুষ্ঠিত সিলেট সিটি করপোরেশনের পঞ্চম নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ১ লাখ ১৯ হাজার ৯৯১টি ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হন। সেই নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি’র চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা, টানা দুইবারের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী দলীয় সিদ্ধান্তে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেননি।