যুদ্ধের প্রভাব দেশের মেগা প্রকল্পেও

যুদ্ধের প্রভাব দেশের মেগা প্রকল্পেও

রয়েল ভিউ ডেস্ক :
ইউক্রেন রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে বিশ্ববাজারে উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি স্থানীয় বাজারে রড সিমেন্টের সরবরাহে ঘাটতির কারণে সরকারের চলমান বড় প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন অগ্রগতি সমস্যায় পড়ছে। 

বেশ কয়েকটি বড় প্রকল্পের বাস্তবায়ন বিদ্যমান বরাদ্দে শেষ করা সম্ভব হবে না বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে, ব্যয় বৃদ্ধির পাশাপাশি কিছু প্রকল্পের বাস্তবায়ন কালও বাড়তে পারে, উপকরণের দাম বৃদ্ধির কারণে ইতোমধ্যেই বেশ কিছু প্রকল্পের কাজের গতি কমিয়ে দিয়েছে ঠিকাদাররা। অনেক ঠিকাদার চুক্তির মূল্য বাড়াতে চাচ্ছে। আবার কিছু সাপ্লায়ার উপকরণের দাম বাড়িয়েছেন।

ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে যশোর পর্যন্ত ১৭২ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পে আরও বরাদ্দ লাগতে পারে, সেইসাথে পিছিয়ে যেতে পারে প্রকল্প শেষ করার সময়। 

"তেলের দাম বৃদ্ধির ফলে সব ধরনের উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ায় এ প্রকল্পের কাজে বিঘ্ন ঘটবে," দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন প্রকল্প পরিচালক আফজাল হোসেন। 

রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের অর্থায়নের পাশাপাশি ঠিকাদারির কাজ করছে চীনা প্রতিষ্ঠান। এ অবস্থা চলতে থাকলে  প্রকল্প বাস্তবায়নে মেয়াদ ও সময়কাল দুটেই বাড়বে বলে মন্তব্য করেন প্রকল্প পরিচালক আফজাল। 

তবে পদ্মা সেতু প্রকল্পের কাজ এখনো তেমন বাধার মুখে পড়েনি। ৩০১৯৩ কোটি টাকা ব্যয় ধরে চলমান পদ্মা সেতু প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে ৮৯ শতাংশ। 

"ইট ও সিমেন্টের দাম বেড়ে যাওয়ায় এ প্রকল্পে নানামুখী নেতিবাচক প্রভাব পড়বে, যেহেতু এ প্রকল্পের কাজে স্থানীয় পর্যায়ের বেশ কিছু উপকরণ ব্যবহার করা হচ্ছে," বলেন প্রকল্পটির পরিচালক মো: শফিকুল ইসলাম।

এদিকে দোহাজারী হতে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু হতে মিয়ানমারের নিকটে গুনদুম পর্যন্ত  সিঙ্গেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক মোঃ মফিজুর রহমান বলেন, ইউক্রন-রাশিয়ার যুদ্ধের অজুহাতে অযৌক্তিভাবে নির্মাণ সামগ্রীর দাম বাড়নো হচ্ছে।  

"যে সংকট তিন মাস পরে গিয়ে পড়ার কথা ছিল, এখনই কৃত্রিমভাবে দাম বাড়ানো হচ্ছে। বিএসআরএম, কেএসআরএমের মতো প্রতিষ্ঠান যুদ্ধকে  ইস্যুকে কৃত্রিম সংকট তৈরি করছে। এতে প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাজ ব্যপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে", তিনি বলেন টিবিএসকে। 

তবে প্রকল্পটির পরিচালকের এ বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষন করে বিএসআরএমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমির আলিহুসেন জানান, তাদের কোম্পানির উৎপাদন ও সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে। তবে ভবিষ্যতে দাম বৃদ্ধির আশায় কিছু ডিলার পণ্য মজুদের চেষ্টা করছে।

তবে তিনি বলেন, আগামী মাসে আসতে যাওয়া উপকরণের দাম বেশি হওয়ায় প্রতি টন রডের দাম ৮০০০-১০০০০ টাকা পর্যন্ত বাড়তে পারে।

২০২২ সালের ৩০ জুনের মধ্যে কাজ শেষ করতে ৩৪৯৮৮ কোটি টাকা ব্যয় ধরে প্রকল্পটি অনুমোদন করা হয়েছিল। পরবর্তীতে ৪ হাজার ২৬৯ কোটি টাকা বাড়িয়ে প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা। একইভাবে মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয় ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত। এ পর্যন্ত প্রকল্পের অগ্রগতি প্রায় অর্ধেক।

বিভিন্ন জটিলতায় ইতোমধ্যে স্থবির বাস র‍্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পটি যুদ্ধের কারণে আরেক দফায় সমস্যায় পড়বে বলে মনে করেন প্রকল্পের সড়ক অংশের পরিচালক এএসএম ইলিয়াস শাহ। 

ঢাকার উত্তরপ্রান্তের যাত্রীদের ভোগান্তি কমাতে বিমানবন্দর থেকে গাজীপুর পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার জুড়ে দ্রুতগামী বাসের জন্য পৃথক ডেডিকেটেড লেইন নির্মাণে বাস র‍্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল ২০১২ সালে। 

তিনি বলেন, "স্বাভাবিক অবস্থায় পরিসংখ্যান ব্যুরো প্রকাশিত মূল্যস্ফীতি অনুযায়ী প্রকল্পের কনট্রাক্ট প্যাকেজের ব্যয় বৃদ্ধির সুযোগ থাকে। তবে এবার ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান বলছে, বিবিএস প্রকাশিত মূল্যস্ফীতির চাইতে উপকরণের দাম বেশি বেড়েছে", তিনি বলেন টিবিএসকে। 

লাখ কোটি টাকার বেশি ব্যয় ধরে চলমান রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পে অর্থায়ন করছে রাশিয়া। প্রকল্পে মূল কাজে ঠিকাদারও রাশিয়া। দেশটির প্রায় সাড়ে তিন হাজার শ্রমিক প্রকৌশলী কাজ করেন এ প্রকল্পে। সরাসরি যুদ্ধে সংশ্লিষ্ট ইউক্রেনেরও প্রায় সাড়ে তিনশ জিনবল রয়েছে রূপপুর প্রকল্পে। তবে এ প্রকল্পের জনবলে যুদ্ধের প্রভাব খুব একটা নেই বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

প্রকল্পের একজন দায়িত্বশীল প্রকৌশলী জানান, পারমাণবিক কেন্দ্রটি পরিচালনায় বাংলাদেশের প্রায় ১২০০ কর্মী রাশিয়ায় প্রশিক্ষণ নেবেন, আর তাদের একটি অংশ দেশটিতে রয়েছেন। তবে তারা নিরাপদেই আছেন বলে জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা। 

তবে কোন জটিলতায় রাশিয়ার অর্থ ছাড়ে বন্ধ বা বিলম্ব হলে স্থানীয় প্রকৌশলীদের বিল বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন ওই প্রকৌশলী। এর ফলে অনেকের বেতন বন্ধ হতে পারে বলেও তার আশঙ্কা।

এলেঙ্গা-হাটিকুমরুল-রংপুর মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ' প্রকল্পের পরিচালক মোঃ ওয়ালিউর রহমান বলেন, তেলের দাম বাড়ার ফলে সব কিছুরই দাম বাড়ছে। ইউক্রেন –রাশিয়া থেকে স্ক্র্যাপ আসে। এখন স্ক্র্যাপ ও রডের দাম বেড়ে যাবে। 

"কয়লার দামের কারণে ইটের দাম বাড়বে। এটা আমাদের জন্য বড় ধাক্কা। এতে প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে যাবে। বিকল্প ব্যবস্থায়ও কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। এসব প্রকল্পে বাস্তবায়নের গতি কমে যাবে এবং প্রকল্পের খরচও বেড়ে যাবে", বলেন তিনি। 

ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের পরিচালক মোঃ শাহাবুদ্দিন খান বলেন, এই প্রকল্পের মূল নির্মাণ কাজ আগামী এক –দুই মাসের মধ্যে শুরু হওয়ার কথা। ফলে  এই মুহূর্তে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের তেমন প্রভাব হয়তো আসবে না। তবে দীর্ঘ মেয়াদে এর প্রভাব পড়বে। 

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু প্রকল্পের পরিচালক আল ফাত্তাহ মোঃ মাসউদুর রহমান, তার প্রকল্পে যুদ্ধের প্রভাব কেমন হবে এখনও বোঝা যাচ্ছে না। এই প্রকেল্পে মূল পণ্য আসবে জাপান, ভিয়েতনামসহ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো থেকে। 

আর যদি আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বাড়ার বেড়ে যায় , তাহলে ঠিকাদারের সঙ্গে স্বাক্ষরিত  চুক্তি অনুযায়ী দাম সমন্বয় করা হবে।