যুক্তরাষ্ট্রে ছাড়া হচ্ছে কয়েক লাখ জেনেটিকালি রূপান্তরিত মশা

যুক্তরাষ্ট্রে ছাড়া হচ্ছে কয়েক লাখ জেনেটিকালি রূপান্তরিত মশা

রয়েল ভিউ ডেস্ক :
যুক্তরাষ্ট্রে শীঘ্রই পরীক্ষামূলকভাবে জেনেটিকালি রূপান্তরিত কয়েক লাখ মশা ছাড়ার একটি প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে দেশটির পরিবেশ রক্ষা বিষয়ক সংস্থা এনভায়রনমেন্টাল প্রটেকশন এজেন্সি (ইপিএ)।

নতুন পরিবর্তিত জিনের মশাগুলো রোগবাহী মশাদের প্রতিরোধ করতে সক্ষম হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

বায়োটেকনোলজি প্রতিষ্ঠান অক্সিটেক ইতোমধ্যেই জেনেটিকালি পরিবর্তিত এডিস ইজিপ্টি মশা নিয়ে আসতে সফল হয়েছে।

প্রকল্পের অংশ হিসেবে পুরুষ মশাগুলোর মধ্যে জিনগত পরিবর্তন ঘটিয়ে সেগুলো ঝোপঝাড়ে ছেড়ে দেওয়া হবে। পরিবর্তিত জিনের মশাগুলো নারী মশার সঙ্গে মিলিত হওয়ার সুযোগ পাবে। নারী মশারাই রক্তের জন্য মানুষকে কামড়ে থাকে। মিলনের ফলে যে সন্তানদের জন্ম হবে তারা নারী হোক বা পুরুষ, প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার আগেই মারা যাবে বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

গত বছর এক পাইলট প্রকল্পের অংশ হিসেবে ফ্লোরিডা দ্বীপপুঞ্জে কয়েক লাখ মশা ছেড়ে দেওয়া হয়। গত সোমবার ইপিএ ফ্লোরিডাসহ ক্যালিফোর্নিয়ার চার কাউন্টিতে প্রকল্প বিস্তারের সবুজ সংকেত পায়। রাজ্যের নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদন লাভের পরই প্রকল্পের কাজ শুরু হবে।

অক্সিটেকের বৈশ্বিক সম্পর্ক প্রধান মেরিডিথ ফেনসম জানান, ইপিএ অনুমোদন অনুযায়ী ফ্লোরিডার একটি কাউন্টি এবং ক্যালিফোর্নিয়ার চার কাউন্টিসহ স্টেটগুলোতে ২ বিলিয়ন বা ২০০ কোটির বেশি জেনিটিকালি রূপান্তরিত পুরুষ মশা ছাড়ার অনুমোদন পাওয়া গেলেও সীমিত পর্যায়েই তা পরিচালিত হবে।

অক্সিটেক জানায়, মশার জিনগত পরিবর্তনের উদ্দেশ্য হলো ডেঙ্গু, জিকা, হলুদ জ্বর ও চিকুনগুনিয়ার মতো মশাবাহী রোগগুলোর সংক্রমণ কমিয়ে আনা।

ফ্লোরিডার মশাগুলোর মধ্যে এডিস ইজিপ্টি মশার সংখ্যা খুব সামান্য হলেও মানবদেহে সংক্রমিত বহু রোগের জন্যই তারা দায়ী।

২০২০ সালে ফ্লোরিডায় ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দেয়।

ক্যালিফোর্নিয়ায় এডিস ইজিপ্টি প্রজাতির মশার সংখ্যা বাড়তে থাকলেও স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের মতে, এখন পর্যন্ত মশার মাধ্যমে ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, জিকা বা হলুদ জ্বর ছড়ানোর প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

ফেনসম বলেন, আমাদের পরিবর্তিত জিনের মশাগুলোর মধ্যে "আত্ম-নিয়ন্ত্রণক্ষম জিন" আছে। খালি চোখে এই মশাগুলোর মধ্যে পার্থক্য ধরা যাবে না। তবে এই মশাগুলো থেকে জন্ম নেওয়া নারী বা পুরুষ মশারা বাঁচবে না।

সময়ের সঙ্গে নারী মশাসহ মশার সংখ্যা কমে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

তবে পরিবেশবাদী বিভিন্ন সংগঠন এই পদক্ষেপের বিরোধিতা করেছে বলে জানিয়েছে গণমাধ্যম।

পরিবেশবাদী সংস্থা ফ্রেন্ডস অব দ্য আর্থের খাদ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক প্রকল্প ব্যবস্থাপক ডানা পার্লস বলেন, "এটি একটি বিধ্বংসী পদক্ষেপ যা জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।"

ফ্লোরিডার প্রকল্প বড় পরিসরে প্রয়োগ করার জন্য যথেষ্ট পরিমাণে পিয়ার-রিভিউড তথ্য উপাত্ত নেই বলে তিনি মনে করেন।

ফেনসম অবশ্য জানিয়েছে যে শীঘ্রই পিয়ার-রিভিউড তথ্য প্রকাশিত হবে। কিন্তু তা সত্ত্বেও যথাযথ পুনঃমূল্যায়ন নেই বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেন পার্ল।

ক্যালিফোর্নিয়ায় এডিস ইজিপ্টি থেকেই ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, জিকা বা হলুদ জ্বর ছড়ানোর প্রমাণ না থাকা নিয়ে পার্ল বলেন, "তাৎক্ষণিক কোনো সমস্যা নেই। একই সঙ্গে অনেক বিষয়ই এখন অবধি অজানা।"

তাছাড়া, অক্সিটেক যা দাবি করছে সেই অনুযায়ী পুরো পরিকল্পনা কাজ করবে কি না সেটাও অজানা বলে তিনি মন্তব্য করেন।

নতুন হাইব্রিড প্রজাতি এমন সব নতুন সমস্যা নিয়ে আসতে পারে যেগুলো সমাধান করাও অসম্ভব হয়ে পড়বে।

"একবার প্রকৃতিতে এই মশাগুলো ছেড়ে দিলে সেগুলো আর ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়," বলেন পার্লস।

"ফলে এমন সমস্যার উদ্ভব হতে পারে যা আগে ছিল না," বলেন তিনি।