লোডশেডিংয়ে সিলেটে প্রিন্টিং ব্যবসায় ধস

লোডশেডিংয়ে সিলেটে প্রিন্টিং ব্যবসায় ধস

রয়েল ভিউ ডেস্ক:
কাগজসহ প্রিন্টিং সংক্রান্ত সরঞ্জামের দাম বৃদ্ধি ও বিদ্যুতের অব্যাহত লোডশেডিংয়ে ধস নেমেছে সিলেটের প্রিন্টিং ব্যবসায়। করোনার ধাক্কা সামলে যখন ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় ছিলেন ব্যবসায়ীরা, তখন বিদ্যুতের লোডশেডিং এর জন্য ব্যবসায়ীদের যেন মাথায় হাত পড়েছে। একদিনের অর্ডার ডেলিভারি দিতে সময় লাগছে চার-পাঁচ দিন। কাজও কমে গেছে। এতে কোটি টাকার লোকসান গুণতে হচ্ছে প্রেস মালিক ও সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের। অলস সময় পার করতে হচ্ছে কর্মচারীদের। 

সিলেটের জিন্দাবাজারের মুক্তিযোদ্ধা গলি, লালদীঘি মার্কেট, বারুতখানা, রাজাম্যানশনসহ নগরীর বিভিন্ন মার্কেটে রয়েছে প্রিন্টিং ব্যবসা। সিলেট প্রেস ব্যবসায়ী সমিতির হিসেব মতে প্রেস রয়েছে শতাধিক। এর বাইরে প্রিন্টিং ব্যবসায় জড়িত রয়েছে সহস্রাধিক ক্ষদ্র ব্যবসায়ী। যারা প্রেসের মালিক না হলেও অর্ডার নিয়ে এসে বিভিন্ন প্রেস থেকে কাজ করিয়ে থাকেন। সম্প্রতি বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়ে লোডশেডিং ব্যবস্থা চালু হওয়ায় কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে এই ব্যবসা। এই লোডশেডিং দিনে সর্বনিম্ন একঘন্টা থেকে চার-পাঁচ ঘন্টা স্থায়ী হচ্ছে। কখনো কখনো ৬/৭ ঘন্টাও লোডশেডিং করা হচ্ছে। জেনারেটর চালিয়ে প্রেস চালাতে গিয়ে ব্যয় বাড়ছে বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন। 

প্রেস মালিক ও কর্মচারীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বছর শেষে ডিসেম্বর মাসে প্রেসগুলোর একটু ব্যস্ততা বেশি থাকে। কারণ সে সময়ে নতুন বছরের ডায়েরী, ক্যালেন্ডার, স্কুলগুলোর ফলাফল শীট, ভর্তি ফরমসহ অন্যান্য কাজের জন্য চাপ থাকে। তবে সিলেটে সারা বছরই কাজ লেগে থাকে। এখানকার সাহিত্য সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড ভালো হওয়ায় প্রকশনা নিয়মিত বের হয়। বেশ কিছু প্রকাশনীও গড়ে উঠেছে সিলেটে। রাজনৈতিক কর্মকান্ডকে ঘিরে বিভিন্ন সময় পোস্টার ছাপা থেকে ব্যানার ইত্যাদি প্রকাশ হয়ে থাকে প্রেস সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান থেকে। এরজন্য সবসময় কাজ লেগে থাকতো প্রেসগুলোতে। সম্প্রতি ভাটা পড়েছে প্রিন্টিং ব্যবসায়। আগের মতো কাজের অর্ডার না থাকাতে প্রেস বন্ধ করে কর্মচারীদের অলস সময় কাটাতে দেখা গেছে। 

বন্দর বাজারের বশির কমপ্লেক্স এর প্রিন্টিং প্রতিষ্ঠান প্রিন্ট পয়েন্ট স্বত্বাধিকারী নোমান বিন আরমান বলেন, সাদা কাগজের দাম ২/৩ মাসের ব্যবধানে কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। কভার বোর্ড গ্লোসি পেপার, গ্লোসি বোর্ড শিট সব জিনিসের দাম বেড়েছ। কালির দাম বেড়েছে। নিউজপ্রিন্টসহ সব ধরনের কাগজের দাম এখন নাগালের বাইরে। এই অবস্থায় কাজ একেবারেই নেই বললে চলে। তিনি আরো বলেন, এরমধ্যে বিদ্যুতের লোডশেডিং শুরু হয়েছে। মাঝে মাঝে ছোট খাটো কাজ পেলে সেটিও সময় মতো সরবরাহ করা যায় না। অনেক সময় বিদ্যুতের জন্য কাজ প্রেসেই তুলা যায় না। এরজন্য অর্ডার সরবরাহ করতেও কথা রাখা যায় না। 

প্রকাশনী সংস্থা চৈতন্য’র  স্বত্বাধিকারী কবি রাজীব চৌধুরী বলেন, সাধারণত ফেব্রুয়ারি মাসের আগে বই প্রকাশনার চাপ বেশি থাকলেও সিলেটে লেখকরা সারা বছরই বই প্রকাশ করে থাকেন। সাহিত্য সংস্কৃতি চর্চা নিয়মিত হওয়ায় সারা বছরই কোন না কোন প্রকাশনার কাজ থাকে। এবার প্রকাশনা সংশ্লিষ্ট পণ্যের অতিরিক্ত মুল্য বৃদ্ধি ও বিদ্যুতের লোডশেডিং এর কারণে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে মুদ্রণ শিল্প। বলা যায়, বর্তমান সময়ে প্রিন্টিং ব্যবসায় ধস নেমেছে। ঘুরে দাঁড়ানো কঠিন হয়ে পড়বে। 

অন্যদিকে ছাপার কাগজের অর্ডার না থাকাতে অলসভাবে সময় কাটাচ্ছে কাগজের দোকানদাররা। তাদের একজন খান পেপার হাউজের এর মালিক আবু বকর । তিনি বলেন, প্রেস চললে কাগজ চলবে, প্রেস চলে না-তাই কাগজও বিক্রি হচ্ছে না। দোকানে সকাল থেকে অলসভাবে বসে আছি এখনো কোন ক্রেতার দেখা নেই। বিদ্যুতের লোডশেডিং ব্যবসার জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।  

উদয়ন অফসেট প্রেসের মালিক ও সিলেট প্রেস মালিক কল্যাণ সমিতির সভাপতি আমিনুল হক বেলাল বলেন, করোনার কারণে দীর্ঘদিন আমাদের লোকসান গুণতে হয়েছে। এবার আরো ভয়াবহ পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে আমাদের। তিনি বলেন, চলতি বছরের শুরুতে ১টন সাধারণ সাদা কাগজের দাম ছিল ৯০ হাজার টাকা। সেটির প্রতি টন এখন ১লাখ ৩০ হাজার টাকায় কিনতে হচ্ছে। চার কালার কালির দাম ছিল মাত্র ১৮শ, সেটি এখন কিনতে হচ্ছে ৪ হাজার টাকায়। চলতি মাসে কাগজের দাম আরো বাড়ার ইঙ্গিত দিয়েছে কোম্পানীগুলো। তিনি বলেন, একটা সময় কাজ লেগেই থাকতো। বর্তমানে অর্ডার নেই বললেই চলে। ছাপার অর্ডার না থাকাতে সবগুলো প্রেসে কম-বেশি লোকসান গুণতে হচ্ছে।  বেলাল আরো বলেন, লোডশেডিং এর জন্য প্রেস চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। ৮ ঘন্টা কর্মঘন্টার অর্ধেক সময় চলে যাচ্ছে বিদ্যুৎহীন।  বলতে গেলে বতর্মানে প্রেস ব্যবসায় ধস নেমে গেছে।

বিদ্যুৎ বিভাগ সিলেট অঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল কাদির বলেন, লোডশেডিংয়ের সময় প্রেস মালিকদের নিজস্ব জেনারেটর দিয়েই কাজ চালাতে হবে। তিনি বলেন, এই লোডশেডিং যে ইচ্ছেকৃত নয়, সেটি আমাদের বুঝতে হবে। পরিস্থিতির উন্নতি হলে লোডশেডিংও কমে আসবে বলে মন্তব্য এ বিদ্যুত কর্মকর্তার। 

-রিপোর্ট: নূর আহমদ (দৈনিক সিলেটের ডাক)