সেতু ঘিরে নিরাপত্তার চাদর

সেতু ঘিরে নিরাপত্তার চাদর

রয়েল ভিউ ডেস্ক:
আগামী ২৫ জুন উদ্বোধনের পর ২৬ জুন ভোর থেকে যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হবে স্বপ্নের পদ্মা সেতু। আর এজন্য সেতুকে ঘিরে নেয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তাবলয়। প্রস্তুত করা হয়েছে দুইপাড়ের নতুন থানা। এছাড়া নদীতে সক্রিয় থাকবে নৌপুলিশ সদস্যরা। তাদের জন্য কেনা হয়েছে অত্যাধুনিক নৌযান। এছাড়া অন্য বাহিনীর সদস্যরাও সক্রিয় থাকবেন সেতুকে ঘিরে। সন্দেহভাজন কিছু চোখে পড়লেই হেফাজতে নেয়া হবে তাকে। গতকাল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত নিরাপত্তাসংক্রান্ত জাতীয় কমিটির বৈঠক এসব বিষয় আলোচনায় আসে। একই সঙ্গে দেশে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া কিছু বিষয় নিয়েও আলোচনা হয় ওই বৈঠকে। সেখানে প্রধানমন্ত্রী গুরুত্বপূর্ণ কিছু দিকনির্দেশনা দেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। তবে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে সাংবাদিকদের কিছু জানানো হয়নি।

নিরাপত্তাসংক্রান্ত জাতীয় কমিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সাবেক ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, যখনই জাতীয় নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ কোনো বিষয় থাকে তখনই তা আমরা সরকারের নজরে আনি। পদ্মা সেতু যেহেতু বতর্মান সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রমের একটি যুগান্তকারী মাইলফলক, তাই এটিকে ঘিরে যাতে কোনো অপশক্তি তৎপর হতে না পারে সে বিষয়ে নিরাপত্তাসংক্রান্ত জাতীয় কমিটির নজরদারি রয়েছে। এ বিষয়ে বৈঠকে কিছু সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

জানা গেছে, আগামী ২৫ জুন বহুল প্রত্যাশিত স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার বাসিন্দাদের। আর এ উপলক্ষে জনসভার আয়োজন করা হয়েছে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে। ধারণা করা হচ্ছে, জনসভায় অন্তত ১০ লাখ মানুষ উপস্থিত থাকবেন। এ উপলক্ষেও দফায় দফায় বৈঠক করেছেন নিরাপত্তা বাহিনীর ঊর্ধ্বতনরা। সর্বোচ্চ সতর্কতা নেয়া হবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে। পুলিশের পক্ষ থেকে সেতুর নিরাপত্তায় দুইপাড়ে থানার পাশাপাশি নৌপথেও পুলিশি পাহারা বসানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এজন্য নৌপুলিশকে নিয়মিত প্যাট্রোল ডিউটি চালানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সরবরাহ করা হয়েছে উন্নতমানের স্পিডবোট। পালাক্রমে দায়িত্ব পালন করবেন নৌপুলিশের সদস্যরা।

পদ্মা সেতুর নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে পুলিশ সদর দফতরের ডিআইজি (অপারেশন্স) হায়দার আলী খান বলেন, জাতীয় নিরাপত্তাসংক্রান্ত কোনো বিষয় দেখা দিলে আমরা গোয়েন্দা সংস্থাকে অধিকতর অ্যাকটিভ করি। দেশে-বিদেশে কোনো অপশক্তি কাজ করছে কিনা, সেটা পর্যালোচনা করি। পদ্মা সেতুর উদ্বোধনকে ঘিরেও এসব বিষয় সামনে এসেছে। সেতুকে ঘিরে এরইমধ্যে দেশের বাইরে থেকেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উসকানি দেয়া হচ্ছে। দেশের ভেতর থেকেও কেউ এ ধরনের কাজ করতে পারে। আমরা তাদের মনিটরিং করছি। সব ধরনের রিস্ক আমরা পর্যালোচনা করেছি। সে অনুযায়ী ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে। সারাদেশেই নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে যেসব জায়গায় বড় পর্দায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠান দেখানো হবে সেসব জায়গায় গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা উন্নত করতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। যারা অনুষ্ঠানস্থলে আসবেন তাদের চলাফেরা নির্বিঘ্ন করতে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা অপপ্রচারকারীদের বিষয়ে সতর্ক আছি। দেশের যে কোনো স্থানে কোনো ঘটনা ঘটিয়ে চক্রান্তকারীরা জনগণের দৃষ্টি অন্যদিকে নেয়া চেষ্টা চালাতে পারে। তাই সারাদেশের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। কেপিআইভুক্ত প্রতিষ্ঠানসহ সব ক্ষেত্রেই পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

সূত্রমতে, সেতুর নিরাপত্তায় দুই পাশে দুটি নতুন থানা ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। এর মধ্যে মুন্সীগঞ্জের লৌহজং প্রান্তের থানাটির নাম হচ্ছে ‘পদ্মা সেতু উত্তর থানা’ এবং শরীয়তপুরের জাজিরা পয়েন্টে ‘পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানা’ নামে ব্যবহূত হবে। শুধু সেতুর নয়, দুইপাড়ের মানুষের নিরাপত্তাও দেবে থানা দুটি। প্রায় ৩২ কোটি ৭৪ লাখ টাকা ব্যয়ে চারতলা এই ভবন দুটি নির্মাণ করেছে পদ্মা সেতু কর্তৃপক্ষ। একজন সহকারী পুলিশ সুপারসহ ৪০ জন করে পুলিশ সদস্য থাকবেন প্রতিটি থানায়। সংযোগ সড়কের টোলপ্লাজার পাশে থানা ভবনের অবকাঠামো নির্মাণ এরইমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে। সেতুর দুই প্রান্তেই দুটি করে ইউনিয়ন এই থানা দুটির অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। লৌহজংয়ের মাওয়া প্রান্তের থানার আওতায় থাকবে মেদেনীমণ্ডল ও কুমারভোগ ইউনিয়ন। জাজিরা পয়েন্টের থানার আওতায় থাকবে পূর্ব নাওডোবা ও পশ্চিম নাওডোবা ইউনিয়ন। পদ্মা সেতু প্রধানমন্ত্রী আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনের পর ওই সেতু দিয়ে দিনে-রাতে ২৪ ঘণ্টায় যানবাহন চলাচল করবে। সারাদেশের মানুষ ও পর্যটকরা সেতু দেখতে যাবেন। ওই সময় সেতু এলাকায় বাড়তি নিরাপত্তা ফোর্স থাকবে। পুলিশ ছাড়াও অন্যান্য বাহিনীর লোকজন নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবে। চলবে নিরাপত্তা কঠোর নজরদারি। তারা পোশাকে ও সাদা পোশাকে সর্বক্ষণ খোঁজখবর রাখবেন বলে সূত্র জানায়।

শরীয়তপুরের পুলিশ সুপার এস এম আশরাফুজ্জামান জানান, জনবল অনুমোদন হয়েছে এখন উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে। মাওয়া প্রান্তের থানা ভবনটি নির্মাণে খরচ হয়েছে ১৬ কোটি ৪৮ লাখ টাকা, জাজিরা প্রান্তে ১৬ কোটি ২৬ লাখ টাকা। প্রায় দুই বছর আগে ভবন দুটির নির্মাণ শেষ হয়। এতদিন থানা দুটি ট্রাফিক পুলিশ ব্যবহার করেছে। সেতু কর্তৃপক্ষ বলছে, থানা দুটির কাজ শুরু হলে পদ্মা সেতুর আশপাশে দুর্ঘটনা প্রতিরোধসহ দুর্ঘটনায় দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হবে। সর্বোপরি আইনশৃঙ্খলা রক্ষা সম্ভব হবে।

জানা গেছে, পদ্মা সেতু বর্তমান সরকারের একটি বড় সাফল্য। এ সাফল্যে ঈর্ষান্বিত হয়ে সরকারবিরোধী চক্র এবং দেশি-বিদেশি স্বার্থান্বেষী মহল নানা অপপ্রচারে লিপ্ত। মহলটি জনগণকে বিভ্রান্ত করার পাশাপাশি সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলতে নানা ধরনের ষড়যন্ত্র করছে। সেতুর উদ্বোধনকে ঘিরে সারাদেশে, বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের মধ্যে উৎসবের আমেজ দেখা যাচ্ছে। এই উৎসবমুখর পরিবেশকে ম্লান করে দিতে এবং জনগণের দৃষ্টিকে ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করতে দেশে নাশকতার সৃষ্টির মাধ্যমে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরির অপচেষ্টা চলছে। এর আগেও ‘পদ্মা সেতুতে মানুষের মাথা লাগবে’ বলে গুজব ছড়িয়ে দেশের পরিস্থিত অস্থিতিশীল করার চেষ্টা চলানো হয়। ওই গুজবের কারণে কয়েকটি স্থানে নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটে। পদ্মা সেতুর উদ্বোধন ঘিরে নতুন ধরনের গুজব তৈরি হতে পারে। সে বিষয়ে সরকারের সতর্ক দৃষ্টি রয়েছে। কাজ করছে পুলিশের সাইবার ইউনিট। একইসঙ্গে অনুষ্ঠানস্থলে প্রধানমন্ত্রীর অবস্থানকালে ও তার গমনাগমনে ব্যক্তি নিরাপত্তায় নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এজন্য গতকাল নিরাপত্তাসংক্রান্ত জাতীয় কমিটির বৈঠক বসে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে। সেখানে উপস্থিত ছিলেন সরকারের হেভিওয়েট মন্ত্রী, সচিব ও বিভিন্ন বাহিনী এবং গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানরা। সেখানে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পদ্মা সেতুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার তাগিদ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।