সারা দেশে নিরাপত্তা জোরদার

সারা দেশে নিরাপত্তা জোরদার

রয়েল ভিউ ডেস্ক:
পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভা সফল করতে সবধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ।

আজ শুক্রবার দুপুরে মাদারীপুরের শিবচরের বাংলাবাজার ঘাট এলাকায় জনসভাস্থল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।

ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, জনসভাস্থল শেষে সবাই নিরাপদে বাড়ি যেতে পারে সেই ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। এখানে এসএসএফ, ডিজিএফআই, এনএসআই, জেলা পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ, নৌপুলিশসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত রয়েছে।

পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কোনো ধরনের হুমকি রয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে আইজিপি বলেন, প্রতি মুহূর্তে আপডেট তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানকে ঘিরে শুধু জনসভাস্থলই নয়, সারা দেশেই নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোড়দার করা হয়েছে। বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা সব ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলা প্রস্তুত রয়েছে।

পুলিশ প্রধান আরো বলেন, পদ্মা সেতু উদ্বোধনী অনুষ্ঠান পুলিশ বাহিনীও উদযাপন করবে। এজন্য সারা দেশের পুলিশ সদস্যরা বাহিনীর পক্ষ থেকে আনন্দ উৎসব করবে।

র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটলিয়নের (র‌্যাব) মহাপরিচালক (ডিজি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন, র‌্যাব-৮ এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি জামিল হাসান, মাদারীপুরের পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেলসহ অন্যরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

সব প্রস্তুতি শেষ, এবার উদ্বোধনের অপেক্ষা

আগামীকাল শনিবার উদ্বোধন হচ্ছে পদ্মা সেতু। সকাল ১০টায় মাওয়া প্রান্তে সেতুর উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তারপর সেখানে এক সুধী সমাবেশে অংশ নেবেন তিনি। পরে তিনি মাদারীপুরের শিবচরে জনসভায় বক্তব্য দেবেন।

নির্মাণকাজ শেষে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এরই মধ্যে সেতু কর্তৃপক্ষকে আনুষ্ঠানিকভাবে পদ্মা সেতু বুঝিয়ে দিয়েছে। সেতুর উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে সেতু এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। যান চলাচলে নিয়ন্ত্রণ আনা হয়েছে। আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে দেশি-বিদেশি অতিথিদের।

দেশের বৃহত্তম পদ্মা সেতুর দৈর্ঘ্য ৬.১৫ কিলোমিটার। এই সেতু রাজধানী ঢাকার সঙ্গে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলাকে যুক্ত করবে।

সেতুর আদলে প্রস্তুত মঞ্চ

মাদারীপুরের শিবচরের বাংলাবাজার ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী ঘাট এলাকায় জনসভায় বক্তব্য দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পদ্মা সেতুর আদলেই তৈরি করা হয়েছে জনসভার মঞ্চ। সমাবেশ সফল করতে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ।

সেতু উদ্বোধনকে ঘিরে শিবচরে ব্যানার-ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে। পদ্মা সেতুর এক্সপ্রেস হাইওয়ে সেজেছে বর্ণিল সাজে। বাংলাবাজার ঘাট এলাকায় প্রস্তুত করা হয়েছে মঞ্চ।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সেতুর টোলপ্লাজা থেকে কাওড়াকান্দি পুরনো ফেরিঘাট এলাকার চারপাশের আট কিলোমিটার এলাকাজুড়ে সাত শতাধিক মাইক লাগানো হয়েছে। লঞ্চের যাত্রী নামানোর জন্য নতুন করে বসানো হয়েছে ১৫টি পন্টুন। ৫০০ অস্থায়ী শৌচাগার নির্মাণ করা হয়েছে। খাওয়ার পানির জন্য বসেছে ৫০০ কল। তিন লাখ বোতলজাত পানির বোতল ও তিন লাখ খাবার স্যালাইন দেওয়া হবে আগতদের। হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে সেবার জন্য থাকছে তিনটি মেডিক্যাল ক্যাম্প। জনসভাস্থল, নৌপথ ও স্থলপথে পুলিশ, র‌্যাবসহ বিভিন্ন আইন- শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে।

নিরাপত্তা জোরদার

সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে সার্বিক নিরাপত্তায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সাড়ে পাঁচ হাজার সদস্য নিয়োজিত থাকবেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এ জন্য সাজানো হয়েছে ত্রিমাত্রিক নিরাপত্তাবলয়।

অনুষ্ঠান ঘিরে ব্যাপক নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়েছে র‌্যাব। এ তথ্য জানিয়ে র‌্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ঘিরে যেকোনো ধরনের নাশকতা মোকাবেলায় সেতুর দুই প্রান্তেই র‌্যাবের স্পেশাল ফোর্সের কমান্ডো টিমকে সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রাখা হয়েছে। প্রস্তুত রয়েছে র‌্যাবের হেলিকপ্টার, সিসিটিভি ক্যামেরায় মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা থাকছে, র‌্যাবের বোমা নিষ্ক্রিয়করণ ইউনিট ও ডগ স্কোয়াড। ভার্চুয়াল জগতে পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে যেকোনো ধরনের গুজব, উসকানিমূলক তথ্য, মিথ্যা তথ্য ছড়ানো প্রতিরোধেও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে র‌্যাব সাইবার মনিটরিং টিম অনলাইনে সার্বক্ষণিক নজরদারি করছে।

আজ শুক্রবার সকাল থেকে রবিবার পর্যন্ত পদ্মা সেতুর সঙ্গে সংযুক্ত মহাসড়কে কাভার্ড ভ্যান ও ট্রাক চলাচল বন্ধ থাকবে জানিয়ে সাংবাদিকদের খুদে বার্তা দিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। পদ্মা সেতুর আশপাশে আজ থেকে ফেরিও চলাচল বন্ধ থাকবে। পদ্মা সেতুর নিরাপত্তায় ঘাটের দুই পাশে অতিরিক্ত নৌ পুলিশ সদস্য মোতায়েন রাখা হবে, যাঁরা ২৪ ঘণ্টা পদ্মা সেতু নিরাপত্তায় কাজ করবেন। হাইওয়ে পুলিশ, ট্রাফিক পুলিশ, জেলা পুলিশ, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন, নৌ পুলিশ ও র‌্যাব মোতায়েন থাকবে।

পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি (অপারেশনস) হায়দার আলী খান গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, একাধিক চক্রান্তকারী গোষ্ঠী পদ্মা সেতু উদ্বোধনের দিন ঢাকা ও ঢাকার বাইরে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে দৃষ্টি ভিন্ন দিকে নিতে পারে ভেবে মাঠ পর্যায়ে সব ধরনের নিরাপত্তা প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

মাওয়া প্রান্তে সেতু উদ্বোধনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাদারীপুরের শিবচরে আওয়ামী লীগের আয়োজিত জনসভায় ভাষণ দেবেন। সেখানে নিরাপত্তাব্যবস্থা প্রসঙ্গে মাদারীপুর পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল বলেন, ‘ভিভিআইপিদের নিরাপত্তা সাধারণত এসএসএফ দিয়ে থাকে। তাদের সঙ্গে আমাদের প্রতিনিয়ত যোগাযোগ হচ্ছে। সমন্বয় করে সভাবেশস্থলে যে ধরনের নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া দরকার, তা আমরা করছি। নৌপথ ও স্থলপথে চার সহস্রাধিক পুলিশ, র‌্যাবসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্য নিয়োজিত থাকবে। ’

সাড়ে তিন হাজার অতিথি

সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সুধী সমাবেশে যোগ দিতে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, বিদেশি কূটনৈতিক, মুক্তিযোদ্ধা, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার সাড়ে তিন হাজার অতিথিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এ বিষয়ে সেতু বিভাগের পরিচালক (প্রশাসন) রুপম আনোয়ার গণমাধ্যমকে জানান, এর মধ্যে অনেকেই আমন্ত্রণ পেয়েছেন। পদ্মা সেতু তৈরিতে যাঁরা বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করেছেন, যেসব বিদেশি কর্মী এই সেতু তৈরিতে পরিশ্রম করেছেন, তাঁরাও আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে থাকছেন।

সেতুর কাজ শেষ

পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শেষ। গত বুধবার সেতু কর্তৃপক্ষকে আনুষ্ঠানিকভাবে পদ্মা সেতু বুঝিয়ে দিয়েছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কম্পানি লিমিটেড। ২০১৪ সালের ২৬ নভেম্বর সেতুর কাজ শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি।

গতকাল বৃহস্পতিবার পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী (মূল সেতু) দেওয়ান মো. আব্দুল কাদের গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন। মূল সেতু, নদীশাসন, সংযোগ সড়ক ও সার্ভিস এরিয়া, জমি অধিগ্রহণ, পুনর্বাসনসহ ছয়টি ভাগে পদ্মা সেতু প্রকল্পের কাজ চলছে। মূল সেতুর কাজ শেষ হলেও নদীশাসনের কাজ এখনো চলমান।

টোল আদায় বন্ধ থাকবে

পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী দিনে অনুষ্ঠানে আসা অতিথিদের যানবাহনসহ সাধারণ যানবাহনের নির্বিঘ্নে চলাচল নিশ্চিত করতে বুড়িগঙ্গা সেতু, আড়িয়াল খাঁ সেতু ও ধলেশ্বরী সেতুতে যানবাহন থেকে টোল আদায় স্থগিত করেছে সরকার। গত সোমবার সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের এক প্রজ্ঞাপনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

সেতু উদ্বোধনের দিন খুলনা, বরিশাল ও গোপালগঞ্জে আরো ১৪টি সেতুর টোল মওকুফ করেছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। একই সঙ্গে ওই দিন একটি ফেরির টোলও মওকুফ করা হয়েছে।