সিলেট নগরীতে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত, পানিবন্দি লক্ষাধিক মানুষ

সিলেট নগরীতে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত, পানিবন্দি লক্ষাধিক মানুষ

রয়েল ভিউ ডেস্ক ॥ সিলেট নগরীতে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সিলেটে থেমে থেমে বৃষ্টি হয়েছে। ফলে দুর্ভোগ বেড়েছে চারদিন থেকে নগরীর লক্ষাধিক পানিবন্দি মানুষের। বন্যার পানি না কমায় বাসার আসবাবপত্র নষ্টের উপক্রম হয়েছে। এছাড়া, বন্যা কবলিত মানুষের জ্বালানি ও বিশুদ্ধ পানির অভাব শুরু হয়েছে। তিনদিন থেকে পানিবন্দি মানুষের পয়ঃনিষ্কাশনসহ বিভিন্ন সমস্যায় বাড়ছে স্বাস্থ্য ঝুঁকি।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় পূর্বাভাসে বলেছে, সুরমা নদীর পানি সিলেট পয়েন্টে বিপদসীমার ৪৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় এ পয়েন্টে নদীর পানি  ৫ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। 

নগরীর মাছিমপুরের এক বাসিন্দা বলেন, বাসায় পানির উপর তিনদিন রয়েছেন। সন্তানদের আত্মীয়ের বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছেন।  পানি কমছে না । রান্নাঘর পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় খাবার ও বিশুদ্ধ পানির জন্য কষ্টে আছেন। ঘরের আসবাবপত্র পানিতে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।  
 
গত তিনদিন থেকে নগরীর শাহজালাল উপশহর, ঘাসিটুলা, মাছিমপুর, ছড়ারপার, তালতলা, কুয়ারপার, মেন্দিবাগ, কামালগড়, চালিবন্দর, যতরপুর, সোবহানিঘাট, কালীঘাট, শেখঘাট, তালতলা, জামতলা, দক্ষিণ সুরমার বঙ্গবীর রোড, ভার্থখলা, মোমিনখলা, পিরোজপুর, আলমপুর ও ঝালোপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় বাসাবাড়ি জলমগ্ন রয়েছে। এসব এলাকায় কোথাও হাঁটু সমান পানি কোথাও কোমর সমান পানি হয়েছে। পানি না কমায় মানুষের ভোগান্তি বৃদ্ধি পাচ্ছে।    

গতকাল বৃহস্পতিবার সরেজমিনে দেখা যায়, নগরীর শাহজালাল উপশহর মূল সড়কে কোমর সমান পানি। প্রাইভেটকার,অটোরিকশা (সিএনজি) বা রিকশা দিয়ে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে এ সড়ক। অনেকে মোটরসাইকেল দিয়ে চলাচলের চেষ্টা করলেও মধ্যরাস্তায় গিয়ে পানিতে আটকে যাচ্ছেন। উপশহরের কয়েকটি ব্লকে কলা গাছের ভেলা ও নৌকা চালাতে দেখা গেছে।
 
নগরের প্রধান বাজার কালীঘাট, মহাজনপট্টি এলাকায় দেখা গেছে, সুরমা নদী সংলগ্ন কালীঘাটের খেয়াঘাট এলাকার শতাধিক দোকানপাটে পানি ঢুকেছে। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানে  কোমর সমান পানি। সেসব দোকানের মালামাল সরিয়ে নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। 

মেন্দিবাগ আবুল মাল আবদুল মুহিত ক্রীড়া কমপ্লেক্সে পানি উঠেছে । কমপ্লেক্স ভবন, ইনডোর কমপ্লেক্সসহ তিনটি ভবনের নিচতলার অর্ধেকাংশ পানির নিচে তলিয়ে গেছে। বিশালাকারের মাঠটি পরিণত হয়েছে জলাশয়ে। পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে ভবনের নিচতলায় অবস্থিত বিভিন্ন কক্ষে চেয়ার-টেবিলসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র ।  

সিলেট মহানগর পুলিশের কোতায়ালি মডেল থানা, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কার্যালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানেও ঢুকেছে পানি। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সিলেটের (সদর) সিনিয়র স্টেশন কর্মকর্তা মো. বেলাল হোসেন বলেন, আমাদের কর্মীদের একটি অংশ দক্ষিণ সুরমা স্টেশনে, আরেকটি অংশ নগরের রিকাবীবাজারে কাজী নজরুল অডিটরিয়ামে আশ্রয় নিয়েছে। এখান থেকেই আপাতত সব কাজ চালানো হবে। 

নগর ঘুরে দেখা গেছে, সিলেট বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়, উপ মহাপুলিশ পরিদর্শকের কার্যালয়, বিভাগীয় বন কর্মকর্তার কার্যালয়, সড়ক ও জনপথের তোপখানা কার্যালয়, সোবহানীঘাট পুলিশ ফাঁড়ি, বিদ্যুতের আঞ্চলিক কার্যালয়সহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। বন্যায় তলিয়ে গেছে নগরীর চালিবন্দর এলাকার হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মৃতদেহ দাহ করার একমাত্র মহাশশ্মানঘাট।