সিলেটে আবারও মিলল গ্যাসের সন্ধান

সিলেটে আবারও মিলল গ্যাসের সন্ধান
সিলেটের হরিপুর ১০ নম্বর কূপে গ্যাসের সন্ধান পাওয়া গেছে

মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম, অতিথি প্রতিবেদক : সিলেটের হরিপুর ১০ নম্বর কূপে গ্যাসের সন্ধান পাওয়া গেছে। এই কূপ থেকে দৈনিক ১৫-২০ মিলিয়ন ঘনফুট হারে গ্যাস উৎপাদন করা সম্ভব হবে জানিয়েছেন সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেড (এসজিএফএল)-ব্যবস্থাপনা পরিচালক(এমডি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান।

আলাপকালে গ্যাস ফিল্ড এমডি আরো জানান, "এই কূপে ৪৩.৭  বিলিয়ন কিউবিক ফিট (বিসিএফ) গ্যাস মজুদ রয়েছে বলে তাঁর ধারণা। গ্রাহক পর্যায়ে যার গড় মূল্য প্রায় ৩৭০০ কোটি টাকা। এই কূপে ২৫৭৬ মিটার পর্যন্ত খনন সম্পন্ন হয়েছে। গ্যাসের উপস্থিতি পরিলক্ষিত হয়েছে মোট ৪টি স্তরে। এর মধ্যে গভীরতম স্তর ২৫৪০-২৫৫০ মিটার গভীরতায় (বটম ইন্টারভেলে) টেস্টিং কাজ চলছে। বর্তমানে দৈনিক ২২ মিলিয়ন ঘনফুট হারে ফ্লো-এর বিপরীতে ওয়েলহেড প্রেসার ৩২৫০ পিএসআইজি (পাউন্ড প্রতি বর্গ গেজ)। 

তিনি আরো জানান, এই কূপ থেকে উৎপাদনে যেতে আরও ছয় মাসের মতো সময় লাগতে পারে। পাইপলাইন বসিয়ে এখান থেকে জাতীয় গ্রিডে গ্যাস সরবরাহ করা হবে। 
গত বছরের ২৪ জুনে কূপটিতে খনন কাজ শুরু হয়। প্রায় ২০২ কোটি টাকা ব্যয়ে সিলেট-১০ নম্বর কূপ খনন করে চীনা কোম্পানি সিনোপেক। গত ১৪ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিলেট ১০ নং কূপ (অনুসন্ধান কূপ) আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন। হরিপুর গ্যাসফিল্ড থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে গোয়াইনঘাটের খাগড়ার হাওরে কূপটির অবস্থান। 
এসজিএফএল সূত্র জানায়, ২০১২ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত গ্যাস অনুসন্ধানে ত্রিমাত্রিক ভূতাত্ত্বিক জরিপ চালায় সিলেট গ্যাসফিল্ড লিমিটেড কোম্পানী। কূপ খননের ৫ মাসের মাথায় এখানে উত্তোলনযোগ্য গ্যাসের সন্ধান মিললো।  
গতকাল রোববার সকালে পরীক্ষামূলকভাবে প্রাথমিক পর্যায়ে সিলেট ১০ নং কূপ (অনুসন্ধান কূপ)-এ গ্যাস উত্তোলন প্রক্রিয়া শুরু হয়। পেট্রোবাংলা, জ্বালানি খনিজ সম্পদ বিভাগের আওতায় এসজিএফএল সিলেট ১০ নং কূপ (অনুসন্ধান কূপ) বাস্তবায়নে কাজ করছে। এসজিএফল-এর এমডি ছাড়াও প্রকল্প পরিচালক এবং কোম্পানীর অন্যান্য প্রকৌশলীগণ এসময় উপস্থিত ছিলেন। নতুন এ গ্যাস কূপের সন্ধান পাওয়ার মাধ্যমে বৃহত্তর জৈন্তিয়া অঞ্চল অর্থনৈতিক দিক দিয়ে আরও এগিয়ে যাবে বলে স্থানীয় বাসিন্দারা প্রত্যাশা করছেন। 

এর আগে, গত ২২ নভেম্বর  সিলেট কৈলাসটিলায় পরিত্যক্ত ২নং কূপ থেকে জাতীয় গ্রিডে গ্যাস সরবরাহ শুরু হয়। সেখান থেকে দৈনিক ৭০ লাখ ঘনফুট গ্যাস যুক্ত হচ্ছে জাতীয় গ্রিডে।

এর আগে গত বছর এসজিএফএল-র আওতাধীন সিলেট-৮, কৈলাশটিলা-৭ ও বিয়ানীবাজার-১ নামে তিনটি পরিত্যক্ত কূপ পুনঃখনন করা হয়। এসব কূপ থেকে দৈনিক ১৬ থেকে ১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় সঞ্চালন লাইনে সরবরাহ করা হচ্ছে। বর্তমানে এসজিএফএলের ১৩টি কূপ গ্যাস উৎপাদনে রয়েছে। এগুলো থেকে দৈনিক ৯৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে এসজিএফএল সূত্র।

১৯৫৫ সালে সিলেটের হরিপুরে প্রথম গ্যাসের সন্ধান পাওয়া যায়। এরপর আবিষ্কৃত হতে থাকে একের পর এক গ্যাসক্ষেত্র। বর্তমানে এসজিএফএলের আওতায় পাঁচটি গ্যাসক্ষেত্র আছে। সেগুলো হলো হরিপুর গ্যাস ফিল্ড, রশিদপুর গ্যাস ফিল্ড, ছাতক গ্যাস ফিল্ড, কৈলাশটিলা গ্যাস ফিল্ড ও বিয়ানীবাজার গ্যাস ফিল্ড। এর মধ্যে ছাতক গ্যাস ফিল্ড পরিত্যক্ত অবস্থায় আছে।