হুহু করে বাড়ছে পানি, বাসা-বাড়িতে পানি প্রবেশ করায় নির্ঘুম রাত কেটেছে অনেকেই

হুহু করে বাড়ছে পানি, বাসা-বাড়িতে পানি প্রবেশ করায় নির্ঘুম রাত কেটেছে অনেকেই

রয়েল ভিউ ডেস্ক:
সিলেট নগরীর মাছিমপুরের বাসিন্দা প্রবীণ সিংহের ঘরের মেঝেতে থৈ থৈ পানি। স্ত্রী, দুই সন্তান ও বৃদ্ধ মাকে নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন খাটের উপর। পঞ্চাশোর্ধ প্রবীণ সিংহ বলেন, যে ভাবে হুহু করে পানি বাড়ছে, তাতে বড়ই অসহায় লাগছে। রাতে  (সোমবার দিনগত) প্রথম দিকে পানি সেচে আটকানোর চেষ্টা করেছি। শেষ রাতে আর পারিনি। পরে নিরুপায় হয়ে ঘরের মূল্যবান আসবাবপত্র খাটের উপর কয়েকটি চেয়ার রেখে তার উপর এনে রেখেছি। রাতে ঘুমের মধ্যেই অনেকের বাসায় হাঁটু পানি পর্যন্ত হয়ে গেছে। সকালে মণিপুরী পাড়া ও কুরিপাড়ার কলোনী খালি হয়ে গেছে। মানুষ হাঁটুপানি ভেঙ্গে বাসা ছেড়ে আত্মীয়-স্বজনের বাসায় গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। এলাকায় বিশুদ্ধ পানি ও খাবারের সঙ্কট দেখা দিয়েছে।

বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের পানি সুরমানদীর বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় জলমগ্ন হয়ে পড়েছে সিলেট নগরী। ছড়া, ড্রেন,নালা উপচে রাস্তা তলিয়ে বসত ঘরে পানি উঠেছে। গত সোমবার দিনগত রাত থেকে বসতঘরে পানি উঠতে শুরু করে। বাসায় পানি প্রবেশ করায় নির্ঘুম রাত কেটেছে অনেকের। অব্যাহতভাবে পানি বৃদ্ধির ফলে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরের আগেই বিভিন্ন পাড়া, বস্তি, কলোনী পানিতে তলিয়ে যায়। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন নগরীর লক্ষাধিক মানুষ। ভোগান্তির শিকার অনেক মানুষ বাসা-বাড়ি ছেড়ে পরিবার নিয়ে অন্যত্র চলে গেছেন। অনেকে পাবিবার নিয়ে খাটের উপর ঠাঁই নিয়েছেন। প্লাবিত এলাকায় বিশুদ্ধ পানি ও শুকনো খাবারের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। এতে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন শিশু ও বৃদ্ধরা। খাবার রান্না বন্ধ রয়েছে এসব পরিবারে। 

এদিকে, পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় নগরীর বিভিন্ন রাস্তা যান চলাচলের অনুপযোগি হয়ে পড়েছে। ফলে, গতকাল মঙ্গলবার সারাদিন নগরীতে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। স্কুল-কলেজ-অফিসগামি মানুষ যানবাহন সঙ্কট ও যানযটের দুর্ভোগে পড়েন।  

সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসিফ আহমদ বলেন, গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় সুরমা নদীর পানি সিলেট পয়েন্টে বিপদসীমার শূন্য দশমিক ৩২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে বইছে। তাই, তীর উপচে নদীর তীরবর্তী নগরীর বিভিন্ন এলাকায় পানি প্রবেশ করেছে।

সুরমা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় গত দু’দিন থেকেই বিভিন্ন নালা উপচে নগরীর নিচু এলাকায় পানি উঠতে শুরু করে। গত সোমবার দিনগত রাত মাছিমপুর, মেন্দিবাগ, ছড়ারপার, কামালগড়,চালিবন্দর, শাহজালাল উপশহর, যতরপুর, সোবহানিঘাট, কালীঘাট, শেখঘাট, তালতলা, জামতলা, মাছুদীঘিরপার, রামের দিঘীরপার, মোগলটুলা, খুলিয়া টুলা, পাঠানটুলা, সাগরদীঘিরপার, সুবিদবাজার, শিবগঞ্জ, মেজরটিলা, মদিনা মার্কেট, দক্ষিণ সুরমার বঙ্গবীর রোড, ভার্থখলা, মোমিনখলা, পিরোজপুর, আলমপুর ও ঝালোপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় বাসা বাড়িতে পানি উঠেছে। 

তালতলা মাছুদীঘিরপারের বাসিন্দা অপূর্ব কর সুমন বলেন, ঘরে পানি প্রবেশ করায় রাত নির্ঘুম কাটিয়েছি। ঘরের সকল আসবাবপত্র একত্রিত করে খাটের উপর রেখেছি। রান্না ঘরে পানি প্রবেশ করায় সকালে খাবার রান্না করা যায়নি। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় পরিবারের সবাইকে নিয়ে খাটের উপর আশ্রয় নিয়েছি। তার প্রতিবেশি সাদত খানের ঘরে হাঁটু পানি। তিনি পরিবারের সদস্যদের শ্বশুর বাড়ি পাঠিয়েছেন। সুমন বলেন, এলাকার অধিকাংশ পরিবার বাসা ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে।
 
মাছিমপুরের ধিরু সিংহ বলেন, গোয়ালিছড়া ও সুরমার পানি একাকার হয়ে পুরো এলাকার বাসা বাড়িতে পানি প্রবেশ করেছে। এলাকার দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় আশপাশের মানুষ ঘর ছেড়ে চলে গেছেন। 

নগরীর উপশহরের বি ব্লকের আমজাদ হোসেন বলেন, এবারের বন্যা থেকে অতীতে আরও অনেক বড় বন্যা হয়েছে। কিন্তু নগরীর এত খারাপ অবস্থা হয়নি। এখন সুরমা নদী ভরাট হয়ে গেছে।  নদী আর আগের মত পানি ধরে রাখতে সক্ষম নয়। পাশাপাশি উন্নয়ন যজ্ঞের নামে নগরীর ড্রেন, নালা ও খাল ময়লা আবর্জনায় ভরে গেছে। সাধারণভাবে পানি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। তিনি বলেন, উপশহরের মত অভিজাত এলাকার অধিকাংশ বাসায় পানি উঠেছে। দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। আগামী ২৪ ঘন্টা এরকম পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে নগরীতে হযবরল অবস্থা সৃষ্টি হবে। 

সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিধায়ক রায় চৌধুরী জানান, সুরমা নদীর পানি উপচে তীরবর্তী এলাকা প্লাবিত হয়েছে। সিলেট নগরীতে বন্যা আশ্রয়ণ কেন্দ্র খোলা হয়েছে। আশ্রিত পরিবারের মাঝে শুকনো খাবার বিতরণ করা হচ্ছে। প্রয়োজনীয় সেবা তারা পাবেন। পুরো বিষয়টি সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। 

সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান বলেন, বন্যার্তদের মধ্যে খাদ্য সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। এছাড়া আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমরা প্রস্তুত রয়েছি।