১২ জুলাই ঢাকার সমাবেশ থেকে আন্দোলনের নতুন ঘোষণা 

 ১২ জুলাই ঢাকার সমাবেশ থেকে আন্দোলনের নতুন ঘোষণা 

রয়েল ভিউ ডেস্ক : বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে’ আগামী ১২ জুলাই ঢাকার সমাবেশ থেকে আন্দোলনের নতুন ঘোষণা আসবে। এই সংগ্রামে দেশের আপামর জনসাধারণকে ঝাঁপিয়ে পড়ে এই ‘দানবীয়’ সরকারের বিদায় নিশ্চিত করার আহ্বান জানান তিনি। 

গতকাল রোববার বিকেলে সিলেট নগরীর সরকারি আলিয়া মাদ্রাসার মাঠে বিএনপির তিন অঙ্গ সংগঠন যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল আয়োজিত তারুণ্যের সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। নির্দলীয়, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন, ভোটাধিকার পুনরুদ্ধার ও শিক্ষা উপকরণের দাম কমানোসহ বিভিন্ন দাবিতে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশ কেন্দ্র করে দুপুর থেকেই খ- খ- মিছিলে মুখরিত হয়ে উঠে পুরো নগরী। বেলা বাড়ার সাথে সাথে সমাবেশস্থলে বিএনপির নেতা-কর্মী বাড়তে থাকে। সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও সিলেট জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে খ- খ- মিছিল নিয়ে আসা যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা সিলেট শহরের বিভিন্ন অলি গলিতে অবস্থান নিয়ে দুপুরের মধ্যেই আলিয়া মাদ্রাসার মাঠে জড়ো হতে দেখা যায়। এ সময় তারা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিসহ বিভিন্ন স্লোগান দেন। সমাবেশস্থলের চারপাশে অসংখ্য ব্যানার, পোস্টার ও ফেস্টুন শোভা পায়। 

রোববার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে সিলেটে নেমে বিমানবন্দর থেকে সরাসরি হযরত শাহজালাল (র.) মাজারে জিয়ারতে যান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এরপর হযরত শাহপরান (র.) মাজারে যান তিনি। 
স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএমএ জিলানীর সভাপতিত্বে সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল আরো বলেন, ‘আগামী ১২ জুলাই ঢাকার সমাবেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনের নতুন কর্মসূচির ঘোষণা আসবে, যার মধ্য দিয়ে দেশের সব মানুষকে জাগ্রত করে এই সরকারকে বিদায় করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দেশের জনগণকে বোকা বানিয়েছিলো এবং প্রতারণা করেছিলো। আগামীতেও তাদের অধীনে নির্বাচন হলে দেশে পরিবর্তন আসবে না, শান্তি আসবে না। এরজন্য তরুণদের আগামী সরকার পতনের আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। নিজেদের অধিকার আদায়ে রাজপথে নামতে হবে।
তরুণদের উদ্দেশ্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘তরুণদের এই সমাবেশের একটাই লক্ষ্য হওয়া উচিত। ‘৭১ সালে আমরা তরুণ ছিলাম, তখন আমরা যুদ্ধ করেছি দেশকে স্বাধীন করার জন্য। আজকে দেশকে মুক্ত করতে, গণতন্ত্রকে মুক্ত করতে তরুণদের লড়াই করতে হবে। বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।  তিনি বলেন, এখন আমাদের ৪০ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা রয়েছে, এই মামলা থেকে মুক্ত হয়ে শান্তির দেশ গড়ার জন্য আমাদের লড়তে হবে।’

ফখরুল আরও বলেন, গত দুটি নির্বাচনে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে। সেজন্যই আমরা আবারও নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি তুলে ধরেছি। তারুণ্যের সমাবেশের মাধ্যমে বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। এর মাধ্যমে দেশের ভাগ্য পরিবর্তন করতে তরুণরা এগিয়ে আসছেন। তিনি বলেন, জীবনবাজি রেখে আমরা এই লড়াইয়ে থাকবো। দেশকে রক্ষা করতে হলে দেশের আপামর জনসাধারণকে এই আন্দোলনে শরীক হবার আহবান জানাচ্ছি। আমাদের কথা পরিষ্কার। সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আরো বলেন, ‘আজকে সমগ্র জাতি অত্যন্ত সংকটের মধ্যে আছে। এ জাতি স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, অস্তিত্ব ও স্বকীয়তা নিয়ে বেঁচে থাকতে পারবে কিনা-এটা নির্ভর করছে আগামী কয়েক মাসের মধ্যে। আগামী জাতীয় সংসদকে সামনে রেখে আওয়ামীলীগ অন্যায় ও বেআইনীভাবে জোর করে আবারও ক্ষমতাকে সম্প্রসারিত করার চেষ্টা করছে।’ 

এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এক দলীয় শাসন ব্যবস্থা বাকশালের বিরোধীতা করে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সর্বাধিনায়ক বঙ্গবীর এমএজি ওসমানী সেদিন পার্লামেন্ট থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন। আজ আবার শেখ হাসিনা একটি ভিন্ন আঙ্গিকে জাতির ওপর বাকশাল চাপিয়ে  দিতে চাচ্ছেন।  তিনি বলেন, নির্বাচন হচ্ছে এ সরকারের ক্ষমতায় টিকে থাকার অস্ত্র। নির্বাচন কমিশনকে তারা তাদের মতো ব্যবহার করে। আওয়ামী লীগ দেশের নির্বাচন ব্যবস্থাকেও ধ্বংস করে দিয়েছে।’  
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ আমলে কখনো সুষ্ঠু নির্বাচন হয় না, এ দল সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে জানে না। এটা তাদের চরিত্রে নেই। আওয়ামী লীগ দেশটাকে তাদের বাপের তালুকদারি মনে করে। এ জন্য তারা বেআইনীভাবে -নির্যাতন করে ক্ষমতা ধরে রাখতে চায়’ ।
বিদ্যুৎ, স্বাস্থ্য ও শিক্ষাসহ অন্যান্য খাতে দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, দেশে তরুণরা চাকুরি পায় না। ১৫-২০ লাখ টাকা দিলে চাকুরি হয়। এ সরকার দেশের মানুষের অনেক ক্ষতি করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে হবে। 
যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান ও ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েলের পরিচালনায় সমাবেশে বক্তব্য দেন-বিএনপির সিলেট বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হাসান জীবন, বিএনপির নিখোঁজ নেতা এম ইলিয়াস আলীর সহধর্মিণী তাহসিনা রুশদীর লুনা, যুবদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসেইন, সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী, যুবদলের জাকির হোসেন সিদ্দিকী, স্বেচ্ছাসেবক দলের ফখরুল ইসলাম রবিন, ছাত্রদল সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, ছাত্রদলের রাকিবুল ইসলাম রাকিব, নতুন ভোটার সাবিয়া জামান আরিফা, সাদিয়া কাওসার রুহিসহ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতাকর্মীরা। সমাবেশে গুম হওয়া নেতাকর্মীদের পরিবারের সদস্যরাও বক্তব্য রাখেন। এরমধ্যে নিখোঁজ জুনেদ আহমদের মা ও নিখোঁজ ছাত্রদল নেতা ইফতেখার আহমদ দিনারের বোন বক্তব্য রাখেন। এছাড়া সাহিত্য সংস্কৃতিকর্মীরা প্রতিবাদী কবিতা আবৃত্তি করেন। শুরুতে তারেক রহমানকে নিয়ে রচিত গান পরিবেশন করেন সঙ্গীত শিল্পী নাসির। এছাড়া অনুষ্ঠানে সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জের নেতাকর্মীরা বক্তব্য রাখেন। 
প্রধান বক্তার বক্তব্যে যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু বলেন, ‘বর্তমান সরকার অবৈধ এবং ক্ষমতায় থাকার তাদের কোনো অধিকার নেই। উপস্থিত নেতাকর্মীকে শপথবাক্য পাঠ করিয়ে টুকু বলেন, আমরা অধিকার আদায় না হওয়া পর্যন্ত ঘরে ফিরে যাবো না। এসময় বেগম খালেদা জিয়াসহ সকল কারাবন্দী নেতাকর্মীর মুক্তি দাবি করেন তিনি।’
ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ বলেন, ‘গত ১৫ বছর ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের নিপীড়নে তরুণ প্রজন্ম সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। তারা ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি। ইনশাআল্লাহ আমরা ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা করেই রাজপথ ছেড়ে যাবো।’
গুম হওয়া বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীর পতœী তাহসিনা রুশদীর লুনা বলেন, ‘যারা সাংগঠনিকভাবে দক্ষ বেছে-বেছে তাদেরকে গুম করা হয়েছে। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের জনপ্রিয় নেতাদেরকে গুম করা হয়েছে। যেন আওয়ামী লীগ সরকার ভোট ডাকাতি করতে পারে। গুম হওয়া যে কত কষ্টের ও বেদনাদায়ক সেটা তারাই বুঝে যাদের পরিবারে কেউ গুম হয়েছেন। তরুণদের বলবো তোমাদের হাত ধরেই ক্ষমতাসীন অবৈধ সরকারের পতন ঘটানো সম্ভব। তোমরা ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসবে।’