দোয়ারাবাজারে নদীভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে

নদী গিলে খাচ্ছে নতুন নতুন ঘরবাড়ি

নদী গিলে খাচ্ছে নতুন নতুন ঘরবাড়ি

রয়েল ভিউ ডেস্ক
সুরমা নদীতে পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নদী গিলে ফেলছে দোয়ারাবাজার উপজেলা সদরের পাঁচটি এলাকাসহ উপজেলা পরিষদ ভবনের সামনের অংশ। নদীভাঙন ঠেকাতে প্রায় দেড় বছর আগে ১৬২ কোটি টাকার নদীখনন এবং তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের কাজ শুরু হলেও গেল শুকনো মৌসুমে ভাঙন এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলে ব্লক না বিছানোয় বেকায়দায় পড়েছেন এই উপজেলা সদরের বাসিন্দারা। গেল তিন—চারদিনে ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। নতুন নতুন ঘরবাড়ি যাচ্ছে নদীগর্ভে।

নদী ভাঙনের ভয়াবহতা বুঝাতে গিয়ে উপজেলা সদরের মাঝেরগাঁওয়ের বাসিন্দা ইসলাম উদ্দিন বললেন, ‘নদীত গোলা আইছে, ৪—৫ দিন ধইরা ভারী বর্ষণও দের, তলেদি ঢেউয়ে ভাঙের, উপরেদি বর্ষণে।’

ইসলাম উদ্দিনের ভাই আলাউদ্দিন বললেন, ‘স্ত্রী, তিন ছেলে, তিন মেয়ে, ছেলের বউ, নাতি নিয়ে কোথায় ওঠবো, তিন চাইরদিন আগেও নদী বেশ দূরে ছিলো, তিন চাইরদিনে ঘরও ধরছে আইয়া, গত রবিবার থাকি মালপত্র সরানি আরম্ভ করছি, ধান—পান না সরাইলে হকলতা গাঙে (নদীত) যাইবো।’

মাঝেরগাঁওয়ের বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম বললেন, হেমন্তের শুরুতেই ভাঙন এলাকায় জিও ব্যাগ বিছিয়ে ব্লক বিছানোর কথা বলেছিলাম। বানানো ব্লক ফেলে নি তারা (ঠিকাদারের লোকজন)। এখন বাড়ি—ঘর ভেঙে নদীতে যাচ্ছে। শেখ হাসিনা ঘর দিয়েছিলেন, এটিও নদীগর্ভে যাবে। গেল তিনদিনে মাঝেরগাঁওয়ের ছত্তার মিয়া, বাদশা মিয়া, আলাউদ্দিন, ইসলাম উদ্দিন, সমর আলী ভট্টু, শফিকুল ইসলাম, নূর উদ্দিন ও হাবিবুল ইসলামের ঘর নদীতে গেছে।

এই গ্রামের নূর উদ্দিন জানালেন, তার ১২ টা বিদেশী গরু আছে, চার গাভী ৫০ লিটার দুধ দেয়।
বললেন, গত তিন চাইর দিনে ঘরের অর্ধেক গেছেগি, অখন না পারমু বাড়িত থাকতাম, না শরনার্থি অইয়া কোনখান যাইতাম পারমু, গরু—বাছুর লইয়া কার বাড়ি গিয়া ওঠমু চিন্তা কইরা পায়রাম না।’
দোয়ারাবাজার উপজেলা সদরের ভবনের সামনের অংশ, মংলারগাঁও, মাঝেরগাঁও, মুরাদপুর, পূর্ব মাছিমপুর ও পশ্চিম মাছিমপুর এলাকা নদী ভাঙনে বিলীন হচ্ছে কয়েক বছর ধরেই। ইতিমধ্যে এসব এলাকার দোকানপাঠসহ দুই শতাধিক বসতবাড়ি নদীতে বিলীন হয়েছে।
স্থানীয় সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিকের চেষ্টায় পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় দোয়ারাবাজারের ভাঙন ঠেকাতে ২০২০ সালের নভেম্বরে দুটি প্রকল্প হাতে নেয়। ৭৮ কোটি টাকায় ছয় প্যাকেজে নদী খনন এবং ৮৪ কোটি টাকায় নয় প্যাকেজে নদী সংরক্ষণ কাজ শুরু করে।
নদী খননের তিনটি প্যাকেজ রাজধানী ঢাকার একোয়া মেরিন এবং আরও তিনটি প্যাকেজের কাজ পায় ঢাকার জামিল এণ্ড ব্রাদার্স।
নদী সংরক্ষণ প্রকল্পের পাঁচ প্যাকেজ রাজধানী ঢাকার আতাউর রহমান খান, দুটি নেত্রকোণার অসিম সিংহ, দুটি জয়েন্ট ভেঞ্চারে পায় ঢাকার টেকবে ইন্টারন্যাশনাল ও প্রিডম কন্সট্রকসন।
এরা সকলেই মন্থরগতিতে কাজ করছেন। স্থানীয়দের দাবি তারা ভাঙন ঠেকাতে গুরুত্ব দিয়ে দ্রুত কাজ করলে এবারের বর্ষায় ভাঙন কম হতো। এলাকাবাসীর ক্ষয়ক্ষতি হতো না।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের দায়িত্বশীলদের দেওয়া এসব ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের ফোনে একাধিকবার এ প্রতিবেদক ফোন দিলেও তারা রিসিভ না করায় বক্তব্য জানা যায় নি।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের দোয়ারাবাজার নদী ভাঙন প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত সুনামগঞ্জ পাউবো’র উপ—বিভাগীয় প্রকৌশলী শমশের আলী মন্টু বললেন, হেমন্ত মওসুমে জিওব্যাগ দিয়ে ব্লক বিছানোর জন্য তাগাদা দেওয়া হয়েছিল। ঠিকাদারদের কাজের মেয়াদ আরও প্রায় এক বছর বাকী আছে। এজন্য কাজ বাস্তবায়নে গড়িমসি করছে তারা। এখন আর পানি না কমলে কোন কাজই করা সম্ভব নয়।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জহুরুল ইসলাম বললেন, বরাদ্দের পর্যাপ্ত অর্থের ছাড় না পাওয়ায় কাজ আদায় বিলম্বিত হচ্ছে। তবে ঠিকাদাররা অবশ্যই বেধে দওয়া সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে হবে।