দুর্যোগের সময় বিদ্যুৎ না থাকায় আতংক

সিলেটে বন্যার দুর্ভোগের সাথে যোগ হয়েছে বিদ্যুৎ বিভ্রাট

সিলেটে বন্যার দুর্ভোগের সাথে যোগ হয়েছে বিদ্যুৎ বিভ্রাট

আনাস হাবিব কলিন্স
সিলেটে বন্যার দুর্ভোগের সাথে যোগ হয়েছে বিদ্যুৎ বিভ্রাট। পাহাড়ি ঢল ও টানা বর্ষণে সৃষ্ট বন্যায় দক্ষিণ সুরমা সাব স্টেশন ডুবে যাওয়ায় গত মঙ্গলবার সকাল থেকে শুরু হওয়া বিদ্যুৎ বিভ্রাটে নাকাল শহর ও গ্রামের লোকজন। দুর্যোগের সময় বিদ্যুৎ সরবরাহ না থাকায় চুরি ডাকাতির আশংকায় লোকজন আতংকিত হয়ে পড়েছেন।

এদিকে, নগরীর ঘাসিটুলা, কানিশাইল, তোপখানা, তালতলা এলাকায় বন্যার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ওইসব এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দিতে চাইছেন বিদ্যুৎ সংশ্লিষ্টরা। 
পল্লী বিদ্যুতের বিয়ানীবাজার এলাকার শেওলা সাবস্টেশনে যে কোন সময় পানি উঠার আশংকা বিরাজ করছে। এ সাবস্টেশনটি বন্ধ হলে সিলেটের জকিগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার অন্ধকারে নিমজ্জিত হবে। তাছাড়া, গ্রামাঞ্চলে পল্লী বিদ্যুতের তারের নীচ দিয়ে সতর্কতার সাথে চলাফেরা করতে মাইকিং শুরু করেছে কর্তৃপক্ষ। 



দক্ষিণ সুরমার বরইকান্দি ১ নম্বর রোডে বিদ্যুৎ বিভাগ-৩ এর বিক্রয় ও  বিতরণ কেন্দ্রের ওই সাবস্টেশনে পানি ঢুকায় গোটা এলাকা গত মঙ্গলবার সকাল থেকে বিদ্যুৎবিহীন রয়েছে। ফলে আলমপুর বিভাগীয় অফিস, বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিস, ডিআইজি অফিস, বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ও বাসাবাড়িতে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন বাসা বাড়ির লোকজন, ব্যবসায়ী, সাধারণ মানুষ, মসজিদ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মাদ্রাসার মানুষজন। ওই সাব-স্টেশনের আওতাধীন টেকনিক্যাল রোড, বরইকান্দি, মোল্লারগাঁও, নিয়ামতপুর, সুনামপুর, স্টেশন রোড, বঙ্গবীর রোড, ঝালোপাড়া রোড, চাঁদনীঘাট রোড, বাস-টার্মিনাল রোড, কদমতলী, মোমিনখলা, শিববাড়ী, চান্দাই, জয়নপুর, ঝালোপাড়া, খোজার-খলা, ভার্থখলা, লাউয়াই, ফিরোজপুর, হুমায়ুন রশীদ চত্বর, চন্ডিপুল, সিলেট রেলওয়ে স্টেশন, বাস-টার্মিনাল, বদিকোণা, মাসুকগঞ্জ বাজারসহ আশেপাশে অনেক এলাকায় বিদ্যুৎ না থাকায় ভূঁতুড়ে পরিবেশ বিরাজ করছে। বন্যার চরম দুর্ভোগের সময় বিদ্যুৎ সরবরাহ না থাকায় এলাকায় চুরি ডাকাতির আশংকায় লোকজন আতংকিত হয়ে পড়েছেন। 

বিদ্যুৎ না থাকার কারণে হোটেল রেস্তোরাঁ ও বাসা-বাড়ির ফ্রিজে থাকা মাছ, মাংস, তরি-তরকারি নষ্ট হতে চলেছে। দীর্ঘ কয়েক ঘণ্টা ধরে বিদ্যুৎ না থাকায় খাবার পানি, ওজুর পানি ও রান্না-বান্না নিয়েও লোকজনকে ভুগান্তি পোহাতে হচ্ছে। সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরেও দু’দিন ধরে বিদ্যুৎ না থাকায় লোকজন সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। 

বন্যার কারণে গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিয়ে পল্লীবিদ্যুতের ওপর নাখোশ গ্রাহকরা। ভুক্তভোগিরা অভিযোগ করে বলেন, অধিকাংশ সময় বিদ্যুৎ না থাকায় তাদের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। 

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সিলেট অঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল কাদির জানান, বন্যায় উদ্ভুত পরিস্থিতির কারণে দক্ষিণ সুরমা সাব স্টেশনে পানি ঢুকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে। বিকল্প উপায়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ করার বিষয়টি নিয়ে তারা কাজ করছেন বলেও জানান তিনি। 

এদিকে, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী ফজলুর রহমান জানান, সংকটের সময়ও নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করার চেষ্টা করছেন। তিনি জানান, নগরীর ঘাসিটুলা, কানিশাইল, তোপখানা এলাকায় বন্যার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নিরাপত্তার স্বার্থে সাময়িকভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দিতে চাইছেন বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ। তবে, এলাকাবাসী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা এ বিষয়ে আগ্রহী না হওয়ায় ঝুঁকি নিয়েই বিদ্যুৎ সঞ্চালন চালু রাখা হয়েছে বলে জানান তিনি। 

পল্লী বিদ্যুৎ-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী দিলীপ চন্দ্র চৌধুরী সিলেটের ডাককে জানান, গ্রামাঞ্চলে পল্লী বিদ্যুতের তারের নীচ দিয়ে সতর্কতার সাথে চলাফেরা করতে ইতোমধ্যে মাইকিং শুরু হয়েছে। শেওলা সাবস্টেশনে যে কোন সময় পানি উঠার আশংকা বিরাজ করছে বলেও জানান তিনি।