ভৈরবে দুই ট্রেনের ভয়াবহ সংঘর্ষ নিহত ২৪ জনের লাশ উদ্ধার

ভৈরবে দুই ট্রেনের ভয়াবহ সংঘর্ষ নিহত ২৪ জনের লাশ উদ্ধার

ডাক ডেস্ক : কিশোরগঞ্জের ভৈরব রেলস্টেশনের আউটার পয়েন্ট এলাকায় মালবাহী ও যাত্রীবাহী দুটি ট্রেনের ভয়াবহ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় নিহত ২৪ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। 
কিশোরগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার আবু জর গিফারী ২৪ জনের লাশ উদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

গতকাল সোমবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ২৪ জনের লাশ উদ্ধার করা হলেও নিহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ট্রেনের নিচে অনেক মানুষ চাপা পড়ে আছেন এবং ক্ষতিগ্রস্ত কোচগুলোতে অনেকেই আহত অবস্থায় পড়ে আছেন বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।
এর আগে বেলা সাড়ে ৩টার দিকে ভৈরব জংশনের আউটার সিগনালের সামনে জগন্নাথপুর নামক এলাকায় ঢাকাগামী এগারসিন্দুর ট্রেনের সাথে চট্টগ্রামগামী মালবাহী ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষে এ দুর্ঘটনা ঘটে। মূলত সিগনালের কোনো জটিলতার কারণে এমন দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস,

র‌্যাব ও পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে আহতদের উদ্ধার করে ভৈরব উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। 
কিশোরগঞ্জ জেলার সিভিল সার্জন ডা. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ হাসপাতালটিতে ৭৫ জনকে আহত অবস্থায় আনা হয়েছে। এর মধ্যে তিন জন মারা গেছেন। এছাড়া গুরুতর আহত ২২ জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। আহতদের অনেকেরই হাত-পা ভেঙে গেছে। তারা ব্যথায় কাতরাচ্ছেন। এটি একটি ছোট হাসপাতাল। আমাদের জনবলও কম। কাজেই জেলার অন্যান্য হাসপাতাল থেকেও ডাক্তার-নার্সদের এখানে আনা হয়েছে। এখন প্রায় ৫০ জন ডাক্তার এবং একশ’ জনের বেশি নার্স এখানে কাজ করছে। আমরা আমাদের সাধ্যতম সেবা দেয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি। আহতদের মধ্যে যাদের অবস্থা গুরুতর, তাদেরকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য বড় হাসপাতালগুলোতে পাঠিয়ে দিচ্ছি। দুর্ঘটনায় যারা মারা গেছেন, তাদের মরদেহও এই হাসপাতালে রাখা হয়েছে। ফলে মরদেহ নেওয়ার জন্য সেখানে আসছেন স্বজনরা। তাদের অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়ছেন, আহাজারি করছেন কেউ কেউ। এছাড়া গুরুতর অবস্থায় বেশ কয়েকজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ আশপাশের অন্যান্য হাসপাতালে পাঠানো হয়। ’
এদিকে, নিহতদের মধ্যে আটজনের পরিচয় মিলেছে। ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিহতদের পরিচয় শনাক্ত করা হচ্ছে।  রাত ৯টার দিকে নিহতদের মধ্যে আটজনের পরিচয় শনাক্ত করেছেন স্বজনরা। পরিচয় শনাক্ত হওয়ার পর স্বজনদের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করছে পুলিশ। ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

নিহত আটজন হলেন- ভৈরবের রাধানগর গ্রামের আব্দুল মান্নানের ছেলে আফজাল হোসেন , করিমগঞ্জ উপজেলার নজরুল ইসলামের স্ত্রী হোসনা আক্তার, কুলিয়ারচর উপজেলার লক্ষ¥ীপুর গ্রামের জিল্লুর রহমানের ছেলে হুমায়ুন কবির, বাজিতপুর উপজেলার ভ্ইুয়াগাঁও গ্রামের আব্দুল হাইয়ের ছেলে আছির উদ্দিন, ভৈরবের উত্তর রানীবাজার গ্রামের প্রধান শীলের ছেলে সবুজ চন্দ্র শীল, শ্রীনগর গ্রামের মানিক মিয়ার ছেলে রাব্বী, কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার চানপুর গ্রামের চান মিয়ার ছেলে সাইমন মিয়া ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার বরইছাড়া গ্রামের মৃত সুরত বালীর ছেলে নিজাম উদ্দিন সরকার।
গতকাল রাত ৮টার দিকে দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ। ঘটনার খবর পেয়ে কিশোরগঞ্জ-৬ (ভৈরব-কুলিয়ারচর) আসনের সংসদ সদস্য ও বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন ও রেলওয়ে ঢাকার কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
এ সময় জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ বলেন, ইতোমধ্যে আমরা ১৭ জনের মরদেহ উদ্ধার করেছি। আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আমাদের এখানে পর্যাপ্ত ডাক্তার আছেন। যাদের উন্নত চিকিৎসা দরকার তাদের ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। নিহতদের মরদেহ দাফনের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২৫ হাজার টাকা করে দেওয়া হচ্ছে।
দুর্ঘটনার পর থেকে ঢাকার সঙ্গে চট্টগ্রাম, সিলেট, কিশোরগঞ্জ, নোয়াখালীসহ পূর্বাঞ্চলের ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে করে হাজার হাজার যাত্রী চরম দুর্ভোগের শিকার হন। তবে, রাত ১০টা নাগাদ রেল যোগাযোগ স্বাভাবিক হয় বলে রেলওয়ে সূত্র জানিয়েছে।
রেলওয়ের ঢাকা বিভাগীয় ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ সফিকুর রহমান জানান, ভয়াবহ এই ট্রেন দুর্ঘটনার কারণে গাফিলতির দায়ে মালবাহী ট্রেনের চালক, সহকারী চালক ও পরিচালককে (গার্ড) সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এছাড়া দুটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে।