ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন: কমলগঞ্জে গাড়ি ও নৌকার অফিসে বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের হামলা

ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন: কমলগঞ্জে গাড়ি ও নৌকার অফিসে বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের হামলা

কমলগঞ্জ সংবাদদাতা : ইউপি নির্বাচনকে সামনে রেখে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে প্রার্থীর প্রধান নির্বাচনী কার্যালয়ে ও স্থানীয় সংসদ সদস্য, সাবেক চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ ড. মো. আব্দুস শহীদের গাড়িবহরে হামলা চালানো হয়েছে। সংসদ সদস্য অক্ষত অবস্থায় থাকলেও দুই পক্ষের সংঘর্ষে সংসদ সদস্যের গানম্যান, সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) ও গাড়িচালকসহ ৯ জন আহত হয়েছেন। গত রোববার রাত ১০টায় কমলগঞ্জ উপজেলার মুন্সীবাজারে এ ঘটনা ঘটে। হামলাকারীরা আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী জুনেল আহমদ তরফদার ও তার সমর্থক বলে প্রতিপক্ষের অভিযোগ।
হামলার ঘটনায় আহতরা হলেন এমপি আব্দুস শহীদের গানম্যান তরিকুল ইসলাম, গাড়িচালক স্বপন, এপিএস ইমাম হোসেন সোহেল, শ্রীমঙ্গলের আওয়ামী লীগ নেতা খালেদ সাইফুল্লাহ, স্বতন্ত্র প্রার্থী জুনেল আহমেদ তরফদার সহ ৯ জন।
খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে সংসদ সদস্যকে নিরাপদে সরিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। আহতদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গুরুতর আহত দুজনকে সিলেটে স্থানান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। ঘটনার পরপরই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
এ ঘটনায় নৌকার প্রার্থীর পক্ষে ৩৫ জনকে আসামী করে কমলগঞ্জ থানায় একটি মামলা হয়েছে। পুলিশ এ ঘটনায় রহিমপুর ইউনিয়নের ছয়কুট গ্রামের রাসেল মিয়া (৩২) ও প্রতাপী গ্রামের ওয়াহিদ মিয়া (৩৭) কে আটক করেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, স্থানীয় সাংসদ ও সাবেক চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ ড. মো. আব্দুস শহীদ এমপি গাড়ি বহর নিয়ে মুন্সীবাজার এলাকায় তাঁর ছোট ভাই নৌকার প্রার্থী ইফতেখার আহমদ বদরুলের প্রধান নির্বাচনী কার্যালয়ের সামনে পৌঁছান। এ সময় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী জুনেল আহমদ তরফদার (ঘোড়া প্রতীক) এর সমর্থকরা মোবাইল ফোন দিয়ে ছবি উঠাতে থাকে। এ নিয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। সংঘর্ষে স্থানীয় সাংসদের ব্যক্তিগত সহকারী ইমাম হোসেন সোহেল, গানম্যান তরিকুল ইসলাম, গাড়িচালক স্বপনসহ অন্তত ৯ জন আহত হয়েছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রহিমপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে স্থানীয় সংসদ সদস্য, অনুমিত হিসাব সম্পর্কিত কমিটির সভাপতি, সাবেক চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ ড. মো. আব্দুস শহীদের ছোট ভাই বর্তমান চেয়ারম্যান ইফতেখার আহমেদ বদরুল নৌকা নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। অপর চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ও সদ্য বহিস্কৃত উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জুনেল আহমেদ তরফদার। গত রোবাবার রাতে শমশেরনগর থেকে ব্যক্তিগত একটি অনুষ্ঠান শেষ করে মৌলভীবাজার ফেরার পথে মুন্সিবাজারস্থ নৌকার প্রধান নির্বাচনী কার্যালয়ের সামনে এলে এলাকাবাসীর অনুরোধে নৌকার প্রধান নির্বাচনী অফিসে এসে চা খাওয়ার সময় বিদ্রোহী প্রার্থী জুনেল আহমদ তরফদার তার সমর্থকদের নিয়ে নৌকার প্রধান নির্বাচনী অফিসে হঠাৎ আচরণবিধি লংঘনের কথা বলে অতর্কিতভাবে দেশীয় অস্ত্র, লাঠিসোটা নিয়ে হামলা চালান।

এ ঘটনার খবর পেয়ে সংসদ সদস্যের ছোট ভাই চেয়ারম্যান প্রার্থী ইফতেখার আহমেদ বদরুলসহ সমর্থকরা দ্রুত ঘটনাস্থলে আসলে উভয় পক্ষের মাঝে কয়েক দফা ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়। ঘটনার খবর পেয়ে কমলগঞ্জ থানা থেকে পরিদর্শক (তদন্ত) সোহেল রানার নেতৃত্বে অতিরিক্ত পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। সাথে সাথে সাংসদকে উদ্ধার করে ও আহতদের কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। হামলার সময় অফিসের সাটার বন্ধ করে দেয়া হয়। বাইরে দুই পক্ষের সংঘর্ষের খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
দু’পক্ষের হামলার ঘটনায় এমপি আব্দুস শহীদের গানম্যান তরিকুল ইসলাম, গাড়িচালক স্বপন, এপিএস ইমাম হোসেন সোহেল, শ্রীমঙ্গলের আওয়ামী লীগ নেতা খালেদ সাইফুল্লাহসহ ৫ জন আহত হন। তাদের একজনের মাথা ফেটে গেছে এবং একজনের হাত ভেঙে গেছে। অপরদিকে, স্বতন্ত্র প্রার্থী জুনেল আহমেদ তরফদারসহ ৪ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন বলে তারা দাবী করছেন। এর মধ্যে গুরুতর ৫জন মৌলভীবাজার সদর হাসপাতাল ও সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
খবর পেয়ে পুলিশ এসে উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদ এমপিকে নিরাপদে সরিয়ে নেয়। পুলিশ আহতদের উদ্ধার করে কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসলে গুরুতর আহত গানম্যান তরিকুল ইসলাম, গাড়িচালক স্বপন ও ব্যক্তিগত একান্ত সহকারী ইমাম হোসেন সোহেলকে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
রাতে স্থানীয় সংসদ সদস্য উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদ আহতদের দেখতে কমলগঞ্জ হাসপাতালে যান এবং রাত ১২টায় শ্রীমঙ্গলস্থ নিজ বাসায় চলে যান। এদিকে, ঘটনার পর বিদ্রোহী প্রার্থী ও সমর্থকরা বাজার এলাকা থেকে সরে যান।
কমলগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) সোহেল রানা হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, সংসদ সদস্য অক্ষত আছেন তবে তার গানম্যান, এপিএস ও গাড়িচালক আহত হয়েছেন। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে।
মামলার বাদী ইমতিয়াজ আহমেদ বুলবুল জানান, বড় ভাই সংসদ সদস্য উপাধ্যক্ষ ড. মো. আব্দুস শহীদ একেবারে ব্যক্তিগত সফরে রোববার সন্ধ্যা রাতে শমশেরনগরে তার এক ছাত্রের বাসায় এসেছিলেন। সেখান থেকে গ্রামের বাড়ি সিদ্ধেশ্বরপুর হয়ে শ্রীমঙ্গল ফেরার পথে ছোট ভাই চেয়ারম্যান প্রার্থী ইমতিয়াজ আহমেদের সাথে দেখা করতে আসেন। তাকে না পেয়ে তিনি তার অফিসে বসেন। এ সময় পূর্ব পরিকল্পিতভাবে ওঁৎ পেতে থাকা আওয়ামী বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী জুনেল আহমেদ তরফদারের উপস্থিতিতে তার নির্দেশনায় এ হামলা চালানো হয়।
রহিমপুর ইউনিয়নের আওয়ামী বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী জুনেল আহমেদ তরফদার জানান, নির্বাচনী আচরণবিধি লংঘন করে ছয় বারের নির্বাচিত আওয়ামী লীগের দলীয় সংসদ সদস্য উপাধ্যক্ষ ড. মো. আব্দুস শহীদ প্রভাব বিস্তার করতে চেয়েছিলেন। বিক্ষুদ্ধ লোকজন ক্ষোভে এ ঘটনা ঘটিয়েছে। তিনি কোন হামলার নির্দেশও দেননি ও হামলাও করেননি।
এ ঘটনায় নৌকার প্রার্থী ইফতেখার আহমেদ বদরুলের প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট বড় ভাই ইমতিয়াজ আহমেদ বুলবুল বাদী হয়ে ৩৫ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরো ২০/২৫ জনকে আসামী করে সোমবার সকালে কমলগঞ্জ থানায় একটি মামলা করেন। এ ঘটনায় পুলিশ দুজনকে আটক করে।
কমলগঞ্জ থানার ওসি ইয়ারদৌস হাসান হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, এ ঘটনায় কমলগঞ্জ থানায় একটি মামলা হয়েছে। পুলিশ দুইজন আসামীকে আটক করেছে। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে।
উল্লেখ্য, ৫ম ধাপে আগামীকাল ৫ জানুয়ারি কমলগঞ্জ উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৩৩, সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে ১০৬ ও সাধারণ সদস্য পদে ৩২৭ জনসহ মোট ৪৬৬ জন প্রার্থী অংশ নিচ্ছেন।